সিদ্ধাই
তিস্তা চক্রবর্তী

                       (১)

এটা নিয়ে শালা তিনখানা হল। একে তো আকাশের চাল ফুটো হয়ে সক্কাল থেকে ব্যাঙের পেচ্ছাপের মতো বিস্টি ঝরেই চলেছে , তারমধ্যে ঘাটের মড়াগুলোর টপকানোর যেন ধূম পড়েছে। অবশ্য একটা আঠেরোবিশের কচি মেয়েছেলেও ছিল এদের মধ্যে। বাচ্চা বিয়োতে গিয়ে দুটোই … রাখতেই দেবে না যখন ভগবান দেয় কেন কে জানে।

কানের কাছে তখন থেকে মশাগুলো পিনপিন করেই চলেছে। থাবড়ে থাবড়ে হাতের চেটো লাল হয়ে যাচ্ছে রক্তে। তা বলতে গেলে ছোটলোকের রক্ত চুষে চুষেই তো সব লাল হল, এসব মশাটশা নেহাতই তুশ্চু তাদের কাছে। আর এই ঘেয়ো কুত্তাগুলোও হয়েছে তেমন। গায়ের কাছে এসে বসছে খালি আর গন্ধে শালা অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসছে যেন। তাড়িটা কী আজ একটু বেশিই গেলা হয়ে গেল? প্রতিদিন এত হাড়মাস পোড়ার গন্ধ নাকে নিতে নিতে তো তার আর কোনো গন্ধতেই বমি পাবার কথা নয়, তবে এত বমি উঠে আসছে কেন নাড়িভূড়ি ঠেলে!

নাহ, উঠে দাঁড়াবার আর সুযোগ দিল না। হড়হড় করে বেরিয়ে আসছে দুপুরের ভাত মাংস সব। কুত্তাটা ছুটে এসে শুঁকছে খুব। কী আজব দুনিয়া মাইরি! কিছুই ফেলা যায় না, হাগা বমিও… হেব্বি হাসি পাচ্ছে এখন। পেট থেকে গুড়গুড় করে ঠেলে বেরিয়ে আসছে ওই বমির মতোই।

পূবপাড়ার এই শ্মশানচত্বর সিধু ডোমের খাসতালুক। পাশ দিয়ে সরু সুতোর মতো বয়ে চলেছে সরস্বতী খাল। বছরের বেশির ভাগ সময়েই শুকিয়ে খটখটে হয়ে থাকে। যেটুকু ঘোলা জল দেখা যায় জায়গাবিশেষে সেখানে শুধুই পচা পাঁকের গন্ধ, মরা জীবজন্তুর দেহাবশেষ আর মানুষের বর্জ্যের উৎকট ভেসে থাকা দৃশ্য।

বাপ ফটিকচাঁদ ছিল তার এ তল্লাটের সেরা ডোম। তার হাতের জাদুতে নাকি যেকোনো বডি ঘন্টা যেতে না যেতেই ফুসস হয়ে যেত। সিধু ছোটবেলা থেকেই বাপের পাশেপাশে ঘুরঘুর করে সব শিখেছে। মা অবশ্য কোনোদিনই চায়নি সে এই মড়াঘাঁটার কাজ করুক বাপ ঠাকুদ্দার মতো। সাধ করে ভদ্দরলোকেদের মতো ইস্কুলেও ভত্তি করেছিল। কিন্তু সিধুর মন বসতো না ওই কালো কেলো অক্ষরের খাঁচায়। সারাক্ষণ শ্মশানের ডাক আসতো হুহু হাওয়ার মতো। সিধু উতলা হতো। মাস্টারের পড়া ঢুকতো না কানে। খোলা জানালার দিকে বেবাক শূন্য চেয়ে বসে থাকতো। মাস্টার খুব কড়া লোক ছিল। মাঝেমাঝেই কচি বাচ্চার হাত পিঠ লাল হয়ে যেত কাঁচা কঞ্চির দয়ায়। একদিন সহ্যের সীমা ছাড়ালো। মাস্টারের হাত থেকে বেত কেড়ে নিয়ে সেই যে ছুট দিল সিধু, সেই থেকে পালিয়েছুটেই বেড়ালো সারাজীবন লেখাপড়া থেকে। অনেক কষ্টে ওই নাম সই টুকুই বিদ্যে আর কি… কিন্তু কত বড় বড় বিদ্বান লাশ যে এই মুখ্যুসুখ্যু সিধুর হাতেই ভবনদী পার করল তার ইয়ত্তা নেই।

তবে আজ আর সেই রামও নেই, নেই সেই অযোধ্যাও। এখন শালা মড়ার পরেও টিকিট বাগিয়ে লাইনে অপেক্ষা করতে হয় চুলোর দোরে যাবার জন্য। চিতাকাঠে সাজিয়েগুজিয়ে ওপারে পাঠানোর মধ্যে যে একখানা ব্যাপার তা আর আজকালের চুল্লিতে কই!

একটা জিনিস অবশ্য সিধুর কোনোকালেই পছন্দ নয়। এই যে সাজিয়েগুজিয়ে কাঁধে চাপিয়ে শরীলগুলোকে নিয়ে আসে, তা সেসব খুলিয়ে ল্যাংটা করে ওপারের গাড়ি ধরানোর কী মানে! লাশ বলে কি লজ্জাশরম থাকতে নেই? যে গনগনে আগুনে আস্ত মানুষখান ছাই হয়ে যায় তাতে অঙ্গে একখান কাপড় থাকলে কী এমন অনাছিস্টি হতো?

প্রথম প্রথম সিধুর খুব অস্বস্তি হতো। কত রকম লাশ…বুড়োহাবড়া…জোয়ানমদ্দমাগী… উদলা… কালোধলো… নরম বুক যেন ছুঁয়ে দিলেই এক্ষুনি জেগে উঠবে। শক্ত হয়ে উঠত সিধু ভেতরে ভেতরে। খুব ইচ্ছে করতো কতবার মুঠোয় ভরে নিয়ে… কিন্তু কী অসম্ভব ঠান্ডা শরীর! যেন ছ্যাঁকা লাগে, আগুনে নয়… বরফে। পাপ জাগতো মনে, ভীষণ পাপ!

বমি করে ফেলে এখন ভেতরটা কেমন যেন চুপসে যাওয়া বেলুনের মতো হয়ে আছে। একটা বিড়ি ধরাতে পারলে বেশ হতো। পকেটটা হাতড়াতে দুটো ন্যাতানো বিড়ি যাও বা বেরোলো কিন্তু দেশলাইকাঠি ফুসস… চিরকালই এমন হাফকপালে শালা, এত লোকের চিতে সাজায় সে, কিন্তু তার মুখে আগুনটুকু দেবারও কেউ নেই এই নিব্বংশী জেবনে ধুর ধুর!

মাল খেলেই আজকাল মায়ার মুখটা বড্ড পস্ট হয়ে আসে। হেব্বি খচ্চর মাগী ছিল শালী। বাপটাকে যেন তুক করে রেখেছিল… ব্যাটার বউ যা বলবে বেদবাক্যি! সিধুকে অব্দি পারলে কান ধরে ওঠায় বসায়। রাতে বিছানায় তার সাথে দস্যিপনায় সিধুর মতো তাগড়া জোয়ান অব্দি ঘেমেনেয়ে নাজেহাল হয়ে যেত। দু’দুটো বছর…মাঘের শীত অব্দি জব্দ ছিল মায়ার সোহাগে। নরম কুঁড়িধরা বুক থেকে যেন গরম ভাপ বেরুত। হাত সেঁকতে সেঁকতে কখন যে দুটো শরীর মিলেমিশে…

মায়াটাও কেমন সংসারের মায়া কাটিয়ে পালালো। নাহ, তাকে পোড়াতে হয়নি অবিশ্যি, তার আগেই মুখপুড়ি রতন মিস্তিরির সাথে আশনাই রচিয়ে ফুড়ুত, হাহাহাহা…

সিধু এখনো সেই ভাঙা চৌকাঠ আগলেই পড়ে রয়েছে। মায়াজাল কেটে বেরুতে আর পারলো কই?

বাদলা দিন বলেই হয়তো কেমন যেন শীত জড়িয়ে ধরছে আজ সিধুর শরীর জুড়ে। চারপাশে জলকাদা। খালি পায়ে কাদা ভেঙে অফিসঘরের ছাউনির দিকে এগোতে গিয়ে বারবার পা টলে যাচ্ছে। অফিসে ইদানীং বছর ত্রিশ-পঁয়ত্রিশের এক ছোকরা বসছে। ব্যাটা এমন চশমা এঁটে লাশের নাম লেখে যেন যমরাজের খাসমন্ত্রী। এখন নিশ্চয়ই ঘুমোচ্ছে লাটসাহেব। টোকা দিয়ে একটু আগুন মেলে কিনা দেখা যাক।

                         (২)

কারেন্ট অফ হয়েছে অনেকক্ষণ। ইমারজেন্সি লাইটখানা দীর্ঘদিন ঠিকমতো চার্জ না দেওয়ায় কাজ করছে না। এমতাবস্থায় মোমবাতিই সম্বল। একে শ্মশান, তায় এই টিমটিমে মোমবাতি …ছোটবেলায় পড়া ভূতের গপ্পোগুলোর মতে এরেই কয় আদর্শ সেটিং। এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে নিজেকেও খানিকটা অশরীরীর মতোই লাগে তিলকের। বি.কম পাশ করার পর বছর কয়েক অনেকরকম কাজ করার চেষ্টা করেছে তিলক। ডোর -টু- ডোর সেলসম্যানগিরি থেকে বড়বাজারের গদিতে খাতা লেখা। মাঝে কিছুদিন তো শাড়ির বিজনেসও…সেই করতে করতেই দুলেপাড়ার শ্যামলীর সাথে ভাবভালবাসা। শ্যামলীর মামা স্থানীয় পঞ্চায়েতের একজন মুরুব্বি গোছের। তিনিই এই লাশখাতা লেখার কাজখানা জোগাড় করে দিয়েছেন বিয়ের পর। শাড়ির ব্যবসাটা শ্যামলীই চালায় এখন। রোগা চেহারাটা এখন তার বেশ ভরাট হয়েছে সংসারের চাবির ভারে। শুধু তিলক নিজেই এই রাতবিরেতে শ্মশানে জেগেজেগে হদ্দরোগা হচ্ছে চোরাঅম্বলে। ভোররাতে বাড়ি ফিরে রোজ দেখে শ্যামলী ছেলেকে জড়িয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ওই সময় খুব ইচ্ছে হয় তিলকের বিয়ের পর প্রথম দিককার ভোররাতগুলোর মতো শ্যামলীকে আঁকড়ে…ধুস, সে গুড়ে বালি!এমন মুখঝামটা দেয় শালী, যে পিরিতের ধুনকি মুহূর্তে চটকে যায়।

“একটু আগুন হবে নাকি খাতাবাবু? গলাটা বড্ড শুকিয়ে গেছে। একটু দম নে নিতাম।”

সিধু ডোমের গলা পেয়ে ঝিমুনিটা কেটে গেল তিলকের। এই স্যাঁতসেঁতে জোলো রাতে ভেতরের সব আগুন যেখানে ফুস করে নিভে যায়, তখন তাদের মতো যমের অরুচির বাইরের আগুনের ওপর ভরসা করতে হয় বৈকি।

দেশলাইটা এগিয়ে দিতে দিতে তিলক বলে উঠল,

“আর কতক্ষণ টানবে কাকা? এবার মাদুর গুটোও। কী মনে হয়, আজ আর নতুন মাল ঢুকবে?”

সিধু বিড়িতে একটা লম্বা টান দিয়ে বলে,

“সবটাই তো আসা যাওয়ার খেলা রে বাপ। এখানে তুমি কাউকে এনটিরি দিচ্ছো, সেথায় কেউ তোমার নামের টিকিট কাটছে। মাল আমরা এখন সবই পুরোনো…ওই কী যেন বলো তোমরা… সেকেন হ্যান্ড হ্যা হ্যা হ্যা…”

বুড়ো জাতে মাতাল হলে কী হবে, তালে ঠিক। বাংলার মাস্টার মহীতোষবাবু একবার ক্লাসে ‘বিদায়’ কবিতাখানা পড়াতে পড়াতে বলেছিলেন, “মৃত্যু চেতনার মধ্যে যে অসামান্য দার্শনিকতা আছে, তা বোধ করি আর কিছুতেই নেই।” তখন অবশ্য এসব ভারি ভারি দর্শনের কথায় কান না দিয়ে বিশুদ্ধ কোকশাস্ত্র দর্শনেই ভারি মনোযোগ আসতো। সদ্য গুটি পাকছে সেসময়। রবির চেয়ে নীল ছবি টানছে বেশি। তবে আজকাল আফসোস বড় গাঢ় হয়। সিধুকাকার কথাগুলো মাঝেমাঝে কেমন যেন সাধুসন্ন্যাসীদের মতো লাগে শুনতে। অনেকক্ষণ থম মেরে বসে থাকে তিলক। মনে মনে স্যারকে টপ করে একটা প্রণাম করে ক্ষমা চেয়ে নেয়… কিন্তু স্যার তো কবেই…নাহ, এই শ্মশানের চাকরি শালা কেমন যেন গোলমেলে, মরা মানুষগুলো থেকে থেকেই যেন কড়া নেড়ে যায় মনের চারপাশে। বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটা প্লট নেবার ধান্দায় আছে তিলক। ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সাথে বলাকওয়াও পাকা। পেয়ে গেলেই লোন নিয়ে একটা বড় শাড়ির দোকান দেবে ছেলের নামে। ‘রোহন শাড়ি প্যালেস’। তখন এই বিদঘুটে চাকরি থেকে ছুটি তার। যদ্দিন সেসব না হচ্ছে, তদ্দিন এই যমপুরীর দারোয়ানগিরিই ভরসা।

                         (৩)

কেউ চলে গেলে সেই শূন্যতাটুকু অনুভব করতে কিছুটা ফাঁকা সময় প্রয়োজন। মরার সাথে সাথে তার সুযোগ থাকে না। তখন বুক চাপড়ে কেঁদেকেটে অস্থির না হলে লোকে কুচ্ছো গায়, আবার না কাঁদলে ভাবে, “আহা, শোকে পাথর হয়েচে গো!” এর মাঝামাঝি যেন কিছু হতে নেই। তারপর পড়ে থাকা শরীরটাকে ঘিরে শুরু হয় এক বিশাল ব্যস্ততা। কী পরাবে, কে সাজাবে, মানুষটা রূপেগুণে কতটা দেবতুল্য ছিল তার লম্বা ফিরিস্তি, শ্মশানবন্ধুদের লম্বা লিস্টি তাদের নিমিত্ত দইমিষ্টি এইসবের মধ্যে পড়ে প্রাণবায়ু ফুড়ুত হওয়া মানুষটার কথা বেশিরভাগ লোকের কাছেই গৌণ হয়ে পড়ে। কে থাকবে, কে ফিরে যাবে, কার ছেলের পরীক্ষা, মেয়ের সম্বন্ধ পাকা দেখা, বিবাহবার্ষিকীর নতুন গয়না এইসব ফিসফাসে শোক কেমন জানি কর্পূরের মত উড়ে যায় ঘরটা থেকে। বেশ একটা গমগমে পরিবেশ…

ঠিক এই মুহূর্তে যেমন মনে হচ্ছে নতুন লাশখানা এন্ট্রি নেবার পরপরই।

মৃত ব্যক্তির দুই ছেলে মেয়ে জামাই সব এসেছে, সাথে আরও লোকলস্কর। লাইন না থাকায় তারা যে বেশ স্বস্তি অনুভব করছে বোঝাই যায়।

সিধু অনেকক্ষণ তাকিয়ে আছে মেয়েটির মুখের দিকে।খুব চেনা চেনা ঠেকছে যেন! একমাথা কোঁকড়া ঘন চুল, ছোট্ট কপাল, পাতলা ঠোঁট… কিন্তু এর চোখ দুখানা বড় শান্ত, হয়তো প্রথমবার শ্মশানে এসেছে… ভয় পাচ্ছে যেন খুব।

“হাঁ করে দেখছো কী কাকা, শেষ পেরেকখানা পুঁতে ফেলো। ঝাঁপ ফেলতে হবে তো নাকি।”

তিলক হাঁক দেয়। সিধু চোখ নামিয়ে কাজে মন দেয়। বেশ পয়সাওলা ঘর। দামী গরদের ধুতি পাঞ্জাবি পরিয়ে এনেছে। কিন্তু শরীলখানা যেন পোড়া কাঠ, কেমনজানি লোমওঠা ঘেয়ো কুকুরের হাল।

“কী হয়েছেল বাপের?”

সিধুর প্রশ্নে মেয়েটা চোখ মুছতে মুছতে জবাব দেয়,

“ক্যান্সার। কেমো চলছিল… কিন্তু…”

সিধু চমকে উঠল খুব। মেয়েটার গলাখানা অবিকল অমন কেন! কেঁদেছে বলে? নাকি…!

লাশটার মুখের কাছে ঝুঁকে এলো সে। খুব খুঁটিয়ে দেখছে সবকিছু। যেন হারিয়ে যাওয়া কোনো আদল… ছায়া। তারপর মুচকি হেসে হঠাৎই বলে উঠলো,

” হুঁ… সবই মায়া।”

সব মিটতে মিটতে প্রায় ভোর চারটে বাজলো। সব লোকজন ফিরে গেছে দাহকার্য সেরে। ধিকিধিকি জ্বলতে থাকা ছাইভস্মের সামনে দাঁড়িয়ে সিধু। তিলক অফিসঘরের ঝাঁপ ফেলে পাশে এসে দাঁড়ালো। একখানা বিড়ি ধরিয়ে সিধুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

“চলো কাকা, বাড়ি গিয়ে একটু গড়িয়ে নিই। আবার তো সন্ধে হতে না হতেই শুরু হয়ে যাবে…”

বিড়িটা নিয়ে টানতে গিয়ে হঠাৎই সিধু তিলককে জিজ্ঞাসা করে,

“লোকটার নাম কী ছিল খাতাবাবু? রতন?”

তিলক অবাক হল খুব।কিন্তু প্রশ্ন করল না ঘুরে।শুধু বলল,

“হুঁ… রতনলাল মন্ডল… বয়স ৬২, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে জীবিত…”

বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে এগিয়ে যাচ্ছে সিধু ডোম নিভে যাওয়া চিতার দিকে। অনেকদিন হল। আগলে রাখতে রাখতে সে ভুলেই গেছিল যে কিছু জিনিস আর তার নয়। বাপ ফটিকচাঁদ মন্তর দিয়ে গেছিল…

“পরপারের রাস্তা সাজিয়ে দিতে হয় সিধে। সহজ কাজ ভাবিসনে। ডরাবি না কখনো। তা সে যেই হোক। প্রতিবার পুড়ে গিয়েই নতুন শরীল নে আসে মানষে। পোড়াতে ভয় কী! যা কিছু পিছে টেনে ধরে, সব আগুনে ছুঁড়ে দিয়েই মুক্তি… এও এক ধারার সাধনা রে বাপ, হেলাফেলা নয় মোটেও।”

নিভন্ত আগুনে ঢেলে দিচ্ছে সিধু বহুবছরের জমানো ঘেন্না… অভিমান। টুকরো টুকরো শাঁখাপলা ক্ষয়ে যাওয়া চিরুনি আধভাঙা নূপুর খালি টিপের পাতা আরও কত কী সব…

সাধনা পূর্ণ হয়েছে তার এদ্দিনে।

সিধুকাকা নয়, চশমার ঝাপসা কাচের ওপারে তিলক হেঁটে যেতে দেখছে এক সিদ্ধপুরুষকে…

1 Comment

  • Priyanka Bhattacharya

    Reply November 3, 2020 |

    Khub valo laglo, aro lekh, valo valo lekha post kor, pore somriddho hoi

Write a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loading...