তিনটি কবিতা
লোপামুদ্রা রায়চৌধুরী

বিষাদ অর্বাচীন
প্রায় রাতেই স্বপ্ন দেখি
অজস্র সুরেলা মুহূর্ত থেকে ঝরে পড়ছে
আনন্দীগানের মতো চুল
চকচকে , ইলিশের আঁশ—
প্রচণ্ড তেষ্টায় ঘুম ভাঙে
অথচ মুখের ভেতরেই অথৈ টক জল।
মনখারাপের কালচে দাগ
অসাবধানে লেগে যায়
শাড়িতে, শায়ায়—
সহযাত্রী অনিচ্ছুক ট্রাম
ব্রাশ-ট্রাশ না করেই বেরিয়ে পড়েছে
গলায় নাছোড় কফ, ঘড়ঘড়ে।
বিষণ্ণ কণ্ডাকটর
তুমিও কি মাছের স্বপ্ন দেখো?
এ অরণ্য বেঁটে- বেঁটে গাছের জঙ্গল
বামনাবতার!
তবু কী গোপন লাফ পবিত্র চাঁদের দিকে।
চকিত আঙুল সরে যায় অভ্যস্ত জানলায়
নতমুখী স্তনে শেষবার বান ডাকে
উথলোয় বাসি সুখ
আমাদের অজীর্ণ দাম্পত্য সম্পদ।
এখন বিরতি-যাপনে আছি।
দীর্ঘতম সঙ্গমটি শেষ হওয়া মাত্রই
ফিরে যাব নিবিড় গুহায়।
আ- মরি
কিছু সন্ধেবেলা নেমে এসেছিল
শাশ্বতিক দিগন্তরেখায়
বাবার কাঁধের মতো চওড়া মাঠে
একটাই ঘর—
খোড়ো চাল—
ঘাস থেকে ঘাসে
মরে যাওয়া রোদ্দুর
” বাংলাভাষা ” বলে ডাকি—
ফুলো ফুলো রুটি সেঁকে দেয়
ইঁদারায় অস্ত যায় চাঁদ।
এতোটা দেখার পর
মহান ঈশ্বর
ক্যালেণ্ডারের পাতা উল্টে দিয়েছিলেন—
অন্য কৌরব
অন্ধকার এখন নরম হয়ে আসে
আমাদের পাড়ার শেষতম নদীটিও
তিন দিন আগে
তার প্রেমিকের সঙ্গে উধাও হয়ে গেছে।
বিকেল ফুরোলেই
পাড়ার সবাই
অন্ধকারে পা ডুবিয়ে বসি।
কোনও কোনও সন্ধেবেলা চমৎকার চাঁদ ওঠে
আমরা তাড়াতাড়ি কালো চশমা পরেনি
আলো আমাদের ভালো লাগে না।
নদীটিকে হারিয়ে আমরা স্বেচ্ছায় অন্ধত্ব নিয়েছি ।