জলবাড়ি
বৈশাখী রায় চৌধুরী
১. জলের মধ্যে হারিয়ে গেলে জীবন সহজ হয়ে আসে, ভারশূন্য হয়ে আসে চোখ। এই আশায় বহুবার নেমে গেছি জলে, জীবন সহজ হয়নি কোনোদিন বরং নিজের ভেসে যাওয়া উরু আর চিবুক জোড়া দুঃখ দেখে মায়া জেগেছে শুধু। শিরীষগাছে ডেকে উঠেছে ভোরের প্রথম কাক।
২. জলের ধারেই যাবতীয় জলসংসার,জলবাড়ি। ঘোলাটে চাঁদ জলভরা চোখে নিয়ে আছড়ে পড়ছে তোমার গায়ে তুমি স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না ভেতর দিয়ে শিখে নিচ্ছো ভরাডুবির আদর। অসীম আকাশ নীচে অনন্ত ধরাতল মাঝে দিগন্তজোড়া শূন্যতা নিয়ে মানুষ নিশ্চিন্তে বুনে চলেছে তার স্বপ্নের পৃথিবী, জলছবির মতো সুখ।
৩. ছেলেবেলার লাল ঘুড়ি হারিয়ে গেলে জলের ধারে বেড়াতে আসে মানুষের যৌবন।ঢেউ ওঠে। কেঁপে যায় কায়া।জল স্থির না হওয়া অবধি আর নিজেকে চেনা যাবে না এই অপেক্ষাতেই দেখি দুলে ওঠে কেয়াবন। সাপ জন্ম নেয় নিয়তি জুড়ে। দংশনে নীল হয়ে ওঠে পোড়া কপাল। ভাসিয়ে দেওয়াই শ্রেয় ভেবে জলের আরো কাছাকাছি আসি; দেখতে পাই অনেক গভীরে জলের রান্নাঘর। জলন্ত উনুন। পাশে ধ্যানস্থ বার্ধক্য। প্রাক্তন প্রেমিকার হাতের অশৌচ অন্নের আয়োজনে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে তোমার যৌবন, অহংকারের শেষ অস্থি।