ফোলিও নাম্বার ফোর-থার্টিটু
অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়




-ওইখানে যেওনাকো তুমি
বোলোনাকো কথা ওই যুবকের সাথে।
সুরঞ্জনা চমকে ওঠে, অ্যাঁ, কী বললেন? 
-না, না , আজকে আমার খুব ফুচকা খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। সুরঞ্জনার হেডফোনে গমগমে ব্যারিটোন গলাটা চট করে পাল্টে গিয়ে নেই-আঁকড়ার মত একটানা ঘ্যানঘ্যান সুরে বাজতে থাকল। পরিবর্তনটা লাল গিরগিটি যেমন করে  আস্তে আস্তে নীল বা সবুজ হয়ে ওঠে সেরকম মসৃণ না, বরং যেভাবে ল্যাব বিল্ডিং-এর লাগোয়া শিরিষগাছ থেকে টিয়ার ঝাঁক ট্যাঁ-ট্যাঁ করে ডাকতে ডাকতে উড়াল দেয়, সেরকম, অচানক।
-বজ্জাত বুড়ো, সুরঞ্জনা খুব চাপা স্বরে বলে। একটা খিকখিক হাসির মত আওয়াজ শুনতে পায় প্রত্যুত্তরে।
-চুপ করুন। আপনাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে আসা উচিত ছিল আমার। জানেন, আপনি আমার প্রাইভেসি লঙ্ঘন করেছেন?
-আমি! কী যে বল সুরঞ্জনা! আমি কখন-
-থামুন। প্রথমতঃ আমাকে তুমি বলার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? তাছাড়া আমার নাম তো সারিকা।
– আমি তোমার নিজেরই দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সার্চ করে দেখলাম যে সারিকা না, তুমি আসলে সুরঞ্জনা! সারিকা মনে হয় তোমার কোড নেম, প্রভুদের দেওয়া।
-আমাকে নিয়ে সার্চ! সেটা আমার প্রাইভেসিতে হানা দেওয়া না?
-তুমিও তো নাম ভাঁড়িয়ে আমার মনের হাঁড়ির খবর যোগাড় করছিলে!
-কিন্তু ওটাই তো আমার কাজ। আগামি ছ’মাস আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের হাল হকিকত জানা ও কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত জানানো। কর্তাদের দেওয়া কোড নামেই তো আমাদের পরিচয় দেওয়ার কথা।
আর তার বদলে ওদের লুকিয়ে আমি যে আপনাকে বাইরে নিয়ে আসি? গাঁটের পয়সা খরচ করে বে-আইনি সেন্সর, ডিভাইস যোগাড় করে আপনাকে স্পর্শের, গন্ধের অনুভূতির ব্যবস্থা করে দিই? ধরা পড়লে আমার জেল পর্যন্ত্য হতে পারে জানেন?
-তা দাও। তোমার দয়ার শরীর। নইলে ফোলিও নাম্বার ৪৩২-র জন্য এত ভাবো!

বুড়োর নিজেকে হ্যাটা দেওয়া কথাটা কানে লাগল সুরঞ্জনার। লোকটা এমনিতে কথা বলে খুব মেপে মেপে। লিখতো-টিখতো নাকি। শব্দ নিয়েই কারবার ছিল। শরীর বলার সাথে সাথে ওর মনে হল একজোড়া চোখের দৃষ্টি এসে বুঝি তাকে হাওয়ার মতন ছুঁয়ে গেল। পরক্ষণেই সম্বিৎ ফিরল তার। লোকটা তো আসলে একটা প্রোগ্রাম। তার রক্তমাংসের শরীর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সেই কবে।  বিজ্ঞানের অগ্রগতির দৌলতে লোকটার শেষ সতেজ অবস্থার মগজের কেবল একটি সাইবার প্রতিরূপ তাদের এই কোম্পানির আর্কাইভে রয়ে গেছে। কেস নাম্বার ৪৩২।



সেই কবে ২০১০ নাগাদ স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রথম একটি ইঁদুরের মগজের একাংশের প্রতিরূপ বানিয়েছিল তার থেকে আজ ২২০০ খ্রীষ্টাব্দে এসে  মানুষের মগজের পূর্ণ প্রতিরূপ বানানো তাদের পক্ষে জলভাত হয়ে গিয়েছে। যদিও পদ্ধতিটি ব্যয়সাপেক্ষ,  সে কারণে অধিকাংশ লোকের আয়ত্বের বাইরে।

স্টেম সেলের ক্ষেত্রে যেমন হয়েছিল, সেরকমই কিছু অতি উৎসাহী মানুষ বিস্তর পয়সা খরচ করে নিজেদের অস্মিতার প্রতিরূপ বানিয়ে ডেটা-ওয়্যার হাউসিং কোম্পানিগুলিকে দায়িত্ব ও সম্পত্তির উত্তরাধিকার রীতিমত উইল করে অবশ্য দিয়ে যাচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে স্টেম সেল থেকে শরীর নির্মাণ করে তার মগজের নিউরোনে নিউরোনে এই কম্পিউটারের মগজ আপলোড করে ফেলা যায়।

কিন্তু ব্যপারটির নৈতিক দিকটি মানবজাতির জন্য যুগান্তকারী। এর ফলে প্রযুক্তির হাত ধরে মানুষ অমরত্ব পেলেও শেষ পর্যন্ত্য এত অমর মানুষের দাঁড়াবার জায়গা দিতে কি এই পৃথিবী সক্ষম? এই একটি প্রশ্নের কারণে এই জাতীয় গবেষণা আর সরকারি অনুমোদন পাচ্ছে না। শুধু ডেটা কোম্পানিগুলির অভিলেখাগার ভরে উঠছে ডিজিটাল মনের সংগ্রহ দিয়ে।
সে মনগুলি কমপিউটার অন করলে ঘুম থেকে জেগে ওঠে।  মানুষের মত যুক্তি তর্ক আলোচনায় অংশ নেয়, বিজ্ঞের মত মতামত দেয়। কমপিউটার অফ করে দিতে চাইলে ঘুমোতে যেতে না চাওয়া ছোট ছেলের মত বায়না করে।  জেগে উঠলে যুক্তি-তর্ক-আলোচনা-পরচর্চা সব আবার আগের মত শুরু করে দেয়। তাছাড়া সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের জীবনীপঞ্জী নথিভুক্ত করে আলাপ আলোচনাও চালায় আন্তর্জালে। সেই কারণে সামাজিক মাধ্যমে প্রোফাইলগুলির পাশে একটি করে সঙ্কেতচিহ্ন থাকে, ব্যক্তিত্বটি রক্তমাংসের মানুষ না শুধুই মন, বুঝিয়ে দিতে।

প্রাচীন ঔপন্যাসিক নিজের লেখার সংলাপ পাল্টে বলতেই পারতেন, মন, মন, তোমার শরীর নাই,কুসুম?
সমস্যা হল পঞ্চেন্দ্রিয় না থাকার দরুণ এই মনগুলির পৃথিবীর রস-গন্ধ-স্পর্শের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আবার পাওয়ার কোনো উপায় নেই। স্টিমুলাস থেকে বঞ্চিত হয়ে এরা নৈরাশ্যে ভোগে অনেক ক্ষেত্রেই। ফুচকা খাবার মত সামান্য অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তির জন্য আবদার করে।

এই লোকটার মধ্যে অবশ্য সেসবের জন্য আকুতি থাকলেও নৈরাশ্য ততটা নেই।  শব্দের উপর অসামান্য দখল এবং সজীব স্মৃতির দৌলতে সে তার মনের থেকেই যেসব ছবি বাক্যবিন্যাসে প্রকাশ করে যে সুরঞ্জনাও চমকে ওঠে সময়-সময়। তাছাড়া সে গরিব লেখকমাত্র, গাঁটের পয়সা খরচ করে মন ডাউনলোড করে রাখার সামর্থ্য তার ছিল না। বলাই বাহুল্য, রাষ্ট্র মাঝখানে পড়ে তার মনের প্রতিরূপের ব্যবস্থা করে না দিলে সেও মিলিয়ে যেত চিতানলেই। এই কথাও সে বার বার বলতে ভোলে না।
আড্ডা দিতে ভালবাসে। কথায় কথায় মন ভালো করে দেওয়ার মত করে বলে, ভাগ্যিস তুমি এলে। পুরনো কবিতা আওড়ায়, যার কিছু কিছু সুরঞ্জনা শুনেছে নিজের মার গলায়…তবুও অনেক কিছুই তার অজানা। শুধু দেখেছে মাঝে মাঝে লোকটার গলা যেন বছর পঁচিশের তরুণের লিকলিকে বেতের গলা মত হয়ে ওঠে।  মন পড়ে ফেলে।

৩  

-এ কী! বললাম যে ফুচকা খাবো! ফেরত যাচ্ছি কেন আমরা?
-দেখছেন না ক্যাম্পাস গার্ডরা ছুটোছুটি করছে? সিকিউরিটি ব্রীচ হয়েছো কোন। এখন সন্দেহ করলে ইনটেনস সার্চ হবে। সবার। ধরা পড়লে নির্ঘাত জেল। আপনার প্রোফাইল এখন লাইভ থাকার কথা না।
ফোঁত করে একটা শ্বাস ফেলল কি কমপিউটার?

গেটের দিকে গেলে একটা ফুচকার চেইন স্টোর ছিল অবশ্য, দোকানের নাম গোলোকধাম। কিন্তু ধরা পড়ে গেলে চাকরি যাবে নির্ঘাৎ। বায়োডেটায় দাগ লাগবে। রিকিও রাগ করবে খুব। আর ব্যপারটা এই রকম এক উদ্বায়ী বুড়োর জন্য হলে তো কথাই নেই।
রিকি রাগ করবে ভাবতে গিয়ে হেসে ফেলল সুরঞ্জনা। সে তো আরেক বিরাট শিশু।

ঋকমন্ত্র রায়, ওরফে রিকির সঙ্গে সুরঞ্জনার আলাপ বেশিদিনের নয়, মাস ছয় হবে। বায়ো-সায়েন্টিস্ট, একই মাল্টি ন্যাশনালের সমান্তরাল একটা ভার্টিকেলে কি এক ডাঙর কাজ করে সে। পড়শী বিল্ডিং-এ তার ল্যাব। বাড়ি জোকার দিকে। লেদার জ্যাকেট, দামী রোদ-চশমা, পেটানো চেহারা। মহিলামহলে বিশাল ফ্যান-ফলোয়িং।
তা বলে সুরঞ্জনার ঠিক অতটা ক্রাশ খাবার মত কিছু নেই। এইসব খানিক পলকা লাগে তার। তবে ওর বাড়ি খিদিরপুরে। এক আধবার রিকি লিফট দিয়েছে প্রথম দিকে। একসঙ্গে কফি খেয়েছে কফিশপে বার দুই।  সুরঞ্জনা ভেবেছিল রিকির সঙ্গে এর চেয়ে বেশি যোগাযোগ রাখার তার সময়ই হবে না।
কিন্তু গত জুলাই মাসে এক অজানা জ্বরে সে কাবু হয়ে পড়েছিল। কর্তৃপক্ষ চলতি  প্রোটোকল মেনে তাকে আইসোলেশন হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। দশদিন তার বাইরের জগতের সাথে যোগ ছিল মোবাইল ফোনে। প্রথমেই রিকির ফোন থেকে একটা মেসেজ এসেছিল,
-“এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিয়ো৷এক বিকেলে মেলায় কেনা খামখেয়ালী তাল পাখাটাখুব নিশীথে তোমার হাতে কেমন আছে, পত্র দিয়ো৷ক্যালেন্ডারের কোন পাতাটা আমার মতো খুব ব্যথিতডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে, পত্র দিয়ো৷কোন কথাটা অষ্টপ্রহর কেবল বাজে মনের কানে..পত্র দিয়ো, পত্র দিয়ো৷ “

রিকির এরকম কবিতাপ্রীতির কথা তার জানা ছিল না। তাছাড়া, তালপাখা আবার কী, কে জানে! যাই হোক, তারপরের কয়েকদিন রিকি নিয়মিত ফোন করে খোঁজ নিয়েছে। এদিকে ডিউটিতে যাচ্ছে না সুরঞ্জনা, একদিন দেখে কেস নং ৪৩২-এর বুড়ো পিং করেছে..”যাবো না আর ঘরের মধ্যে অই কপালে কী পরেছো/মুখচ্ছবি সুশ্রী অমন, কপাল জুড়ে কী পরেছো।” সুরঞ্জনার ভারি রাগ ধরে, বজ্জাত বুড়োর রস কত! যুৎসই জবাব দেবার আগেই রিকির ফোন বেজে উঠেছে নিয়ম করে।

দশদিন বাদে ছাড়া পেয়ে সে বাইরে বেরিয়ে ট্যাক্সি ডাকবে কি না ভাবছে, দেখে শ্রীমান উল্টোদিকের ফুটপাথ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে, হাতে গোলাপের তোড়া। সুরঞ্জনার বাড়ির লোকের আসার আগেই রিকি তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিল। নিজের গাড়িতে।
সেদিনও ফোলিও নং ৪৩২ এর কমপিউটার কেউ অন করে দিয়ে থাকবে, গাড়িতে বসে থাকতে থাকতেই একটা মেসেজ ঢুকলো নিষ্কর্মা বুড়োর-
“আমি না হয় ভালোবেসেই ভুল করেছি,
ভুল করেছি নষ্ট ফুলের পরাগ মেখেপাঁচ দুপুরের নির্জনতা খুন করেছি, কী আসে যায়?এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে,এক মানবী কতোটা আর কষ্ট দেবে!”

মুখে একটা ফিচেল হাসি ফুটে ওঠার আগেই মুছে নিল সু। এখন থেকে তাকে সু-ই বলা হবে। কারণ মুখ তুলে দেখে সিগনালে দাঁড়িয়ে পড়েছে গাড়ি আর রিকি তাকেই দেখছে একদৃষ্টে, দেখতে দেখতে খুব মোলায়েম স্বরে বলে উঠলো-   
“ধরে-বেঁধে নিতেও পারো তবু সে-মন ঘরে যাবে নাবালক আজও বকুল কুড়ায় তুমি কপালে কী পরেছো? সু “
সু জীবনে কবিতা পড়েনি, তাও দেড়শো-দুশো বছর আগের কবিতা…নইলে তার বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠতো বুড়ো আর রিকির পছন্দের মিল দেখে। সেসব কিছুই হল না, তবুও সেই থেকে রিকির রাগ-অনুরাগের ছটাক-খানিক খোঁজ রাখছে সু। এই-ই, তার বেশি নয় কিন্তু।



কোনোরকমে সিকিউরিটির চোখ এড়িয়ে বিল্ডিং-এ সেঁধিয়ে গেল সু। বুড়োর ঘ্যানঘ্যান অফ করে দিয়েছে আগেই। সিক্সথ ফ্লোরে মেন আর্কাইভের গর্ভে রয়েছে বুড়োর নির্দিষ্ট কনসোল। অফ করে দিলেই আপাতত  ঘুম পাড়ানি মাসিপিসিদের হাতে চলে যাবে বুড়োর মন। ঘ্যানঘ্যানটা অন করা থাকলে, না,না করে একটা কমিক আর্তনাদ ঠিক ভেসে আসতো বুড়োর। তার বদলে পিছন ফিরতেই দেখে মিষ্টার হরিনারায়ণ। আর্কাই মাইন্ডপুলের ডিরেক্টর।
গভীর অভিনিবেশে সু-কে মাপছিলেন। ঠিক মাপা নয় অবশ্য, ভদ্রলোকের চোখের রশ্মিতে মন পড়ে ফেলার স্কিলটা সর্বজনবিদিত। সু নিজের মনকে বললো, নো থটস প্লীজ। খালি হাঁড়ি দেখলে ভাত আছে কি না , এ প্রশ্নই আসবে না মাইন্ড-রীডারের মনে।

কিন্তু আজ অ্যাডভেঞ্চার বোধহয় বেশিই হয়ে গেছিলো, হাঁড়ি অত সহজে খালি হল না। ভাতের হদিশ কি পেয়ে গেলেন হরি স্যার?
-ফোলিও ফোর থার্টিটু ওঅজ অন। এনি প্রবলেম?
-নট এট অল স্যার। টুডে ওয়াজ হিজ ডে অফ অ্যাসেসমেন্ট।
-আজই?     
-আই থিঙ্ক সো স্যার।
হরি একদৃষ্টিতে সু-র দিকে তাকিয়ে থাকলেন। এটা কিন্তু ওনার স্বভাববিরুদ্ধ। গভীর চিন্তার স্বরে বললেন- ইউ নো সামথিং? দিস ফোলিও ফোর থার্টিটু অ্যান্ড ইটস মিডিয়া প্রোফাইল ট্রাবলস মি আ বিট। হি ইজ ওভার্টলি অ্যাক্টিভ ইন মিডিয়া, হি সিম টু বি স্টকিং ইউ। অব লেট হি ইজ অলসো শোয়িং ইন্টারেস্ট, মোর দ্যান ফেয়ার, ইন আ প্রোফাইল অভ আ গাই নেমড রিক। ইজ হি ইন এনি অভ ইয়োর ক্লোজ ফ্রেন্ড লিস্ট?

সু-র মাথাটা ঝাঁ-ঝাঁ করছিল। এরই মধ্যে সে আর রিকি কয়েকবার ঘনিষ্ঠ হয়েছে। চুমু-টুমু, মেকিং আউট। কিন্তু কী একটা অসোয়াস্তি তার ছিলই। কে যেন আড়াল থেকে দেখছে। ও হরি! ব্যপার তবে এই! ভাগ্যিস আর এগোয়নি।
-জাস্ট বি কেয়ারফুল। ইফ ইউ ওয়ান্ট, আই ক্যান লেট ইউ সোয়াপ সাম ফাইলস উইথ আদার্স। হরি আবার বললেন।



রিকিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছিল সু। ক্যাফেটেরিয়ায়।
চাবির রিং নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে রিকি পুরোটা বলেছিল আস্তে আস্তে।
-তুমি তো জানো আমার কাজ সিগনাল প্রসেসর অ্যান্ড সেন্সরি ট্রান্সমিশন নিয়ে। ওই বুড়ো, জীবন রায় একজন কবি। আমাকে বোঝালেন, দ্যাখো ছোকরা, তুমি ট্রেকিং করো, হার্লে ডেভিডসন চালাও, স্পোর্টসে ইন্টারেস্ট, কিন্তু কবিতার কিস্যু বোঝো না।
আর আমার তো কথাই সব। শব্দ, ছন্দ, কবিতা। দুটো মিলে কী একটা প্যাকেজ হবে বুঝতে পারছো?…তা, উনি কথা যোগাতেন। পিং করে কখন কী বলতে হবে….যখন দেখলাম তুমি তাতে ভালই সাড়া দিচ্ছ, তখন জীবন রায়কে মানা করে দেওয়ার হিম্মতটাও চলে গেল।
তারপর অনেকক্ষণ দুজনেই চুপচাপ। নীরবতা ভেঙে রিকি বলল, আমার সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট মুছে দিয়েছি। আপাতত লাদাখ চললাম। তোমার তো বোধহয় আর সময় হবে না, আরেকটা কফি চলবে নাকি, শেষবারের মত?

সু ভাবছিল। কত সম্পর্ক তো জাস্ট শীতলতা, একাকীত্বে শেষ হয়ে যায়। তার তুলনায় একটা পরীক্ষা করে কি দেখা যেতে পারে? ক্রাউডেড ম্যারেজ? ধুস, আফট্রল সেন্সরি ট্রান্সমিশন তো নিয়ন্ত্রণযোগ্য ব্যপার।*

*এই লেখায় কিছু বিশিষ্ট কবিতার চিনেমাটির টালি ভাঙা মোজেইকে উঁকি দিচ্ছে। চিনে নিলে, সে টালির গুণ

1 Comment

  • Supriyo Lahiry

    Reply February 3, 2023 |

    অসাধারণ অরিন্দম। সাধু সাধু সাধু। একদম নতুন চিন্তা আর অপূর্ব এক্সিকিউশন।

Leave a Reply to Supriyo Lahiry Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loading...