অসহবাস
অর্ঘ্য দত্ত

সহবাস শব্দের অপার দ্যোতনাই আঙ্গুল তুলে ইঙ্গিত  করেছে অসহবাস শব্দের দিকে। কবি বন্ধু শৌভিক বন্দোপাধ্যায়ের পরোক্ষ প্ররোচনা ছিল, যদিও তার কলমকে আমি যথেষ্ট প্ররোচিত করতে পারিনি। যে অভিধান দেখতে শেখেনি, খবরের কাগজে রোজ  বিবাহ-বহির্ভূত সহবাসের অভিযোগ নিয়ে চাপান-উতোরের বাজারি সংবাদ পড়ে না তার বা তাদের কাছে নিশ্চয়‌ই ‘সহবাস’-এর অর্থ সহজেই আসে ‘সহিত বাস’ হয়ে। একত্র বাস হয়ে। যৌথ বাস হয়ে। অভিধানে সহবাসের পাশে লেখা ‘রতিক্রিয়া’ তার মনেও আসে না। আবার সহিত বাস মানে কি শুধুই এক ছাতের তলায় বাস? চার দেওয়ালের মধ্যে বাস? বাস‌ও তো কত রকমের। কবি যখন বলেন, “আমি তোমাতে করিব বাস” তখন কি ছাত-দেওয়াল সংকুচিত হয়ে হয়ে ওঠে ব্যক্তির শরীর-মন নাকি সব সীমানা ডিঙিয়ে হয়ে ওঠে এক অপরিসীম পরিসর?

“তুমি পথ থেকে পথে লেখো রাত। আমার তারারা লেখে গাঢ়  সুপ্রভাত। ঊষার ছলনা নেই কোনও; ম্লান স্বরলিপি তবু মোছেনি এখনও তোমার জ্যোৎস্নার নির্যাস। ভুল হয়ে গেছে, তবু তোমার সাথেই বসবাস…”

কবি উমা বন্দ্যোপাধ্যায় এ কোন বসবাসের কথা বলছেন? এ নিশ্চয়‌ই এক ছাতের তলার শরীরী যুগলবাসটুকুর কথা শুধু নয়। এই অন্যতর বাসের কথাও উঠে আসবে ‘অসহবাস’-এর  অছিলায় এটাই ছিল আমাদের অভিপ্রায়। আশা করেছিলাম, আলো পড়বে আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক যৌথবাসে ক্রমবর্ধমান অসহনশীলতার বিষয়ে। প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সহবাসের মধ্যে, অন্য ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে আমাদের সহবাসের মধ্যে এখন অসহনশীলতার ফসল ফলছে রাশি রাশি ভারা ভারা।  কেউ কেউ লিখেছেন‌ও সেসব কথা, কিছু স্পষ্ট করে, কিছু বা ইঙ্গিতে। তবু আরো কেউ কেউ কলম ধরবেন এমনটা আশা করেছিলাম।

একত্র বাস বা যৌথ বাসের প্রসঙ্গে আরো একটা কথা মনে হচ্ছে, যে বায়বীয় ভূবনগ্রামের বাসিন্দা হয়ে উঠেছি এই আমাদের মতো নেটিজেনরা, তারাও কি একরকম ভার্চুয়াল সহবাস‌ই করছি না হাজার হাজার তথাকথিত বন্ধুদের সঙ্গে! শারীরিক যৌথ বাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে  যা কিছু আবেগ, এখানেও তো শীত ভোরের কুয়াশার মতো সেই সব, প্রেম-ভালোবাসা, হিংসা-অসূয়া, দ্বেষ,ভারি হয়ে নেমে আসে ভার্চুয়াল সম্পর্কের ওপরেও। আমরা তাকে এড়াতে পারি না। এই নবীন ভার্চুয়াল সমাজেও ফুটে ওঠে অসহবাসের লক্ষণ! সেসব‌ও তো কেউ কেউ লিখতে পারতেন! 

তবু যারা যা লিখেছেন, সেটুকুও বা কম কী? বম্বেDuck-এর বিষয়ভিত্তিক সংখ্যা শুরু করার পরে এটিই হল দ্বিতীয় সংখ্যা। আমরাও হয়তো ক্রমশঃ অভিজ্ঞ হয়ে উঠলে বেছে নিতে পারব এমন বিষয় যা আরও বেশি সংখ্যক মননশীল লেখক-পাঠককে উদ্দীপ্ত করতে পারবে। 

যে দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে গত দু’বছর ধরে আমরা যাচ্ছি আশা করি ২০২২-এ আমরা তা সম্পূর্ণভাবে অতিক্রম করে আবার ফিরে পাব জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। 

বম্বেDuck-এর পক্ষ থেকে সবাইকে জানাই নতুন বছরের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও প্রীতি। সঙ্গে থাকবেন।

11 Comments

  • মণ্ডল সুব্রত

    Reply January 1, 2022 |

    ❤️❤️

  • উত্তম বিশ্বাস

    Reply January 1, 2022 |

    ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ!’ চুম্বকীয় সম্পাদকীয়! কী যে ভালো লাগল! আরও চেয়েছিলাম। আরও…

    শ্রদ্ধা নিন দাদাভাই!

  • Kaushik Sen

    Reply January 2, 2022 |

    মুগ্ধ হলাম সম্পাদকীয় টি পড়ে

  • লোপামুদ্রা রায়চৌধুরী

    Reply January 2, 2022 |

    কি ভালো!

    • দেবলীনা

      Reply January 2, 2022 |

      বাহ খুব সুন্দর সম্পাদকীয় পড়লাম .. বিষয়ের গুরুত্বকে আরো সুন্দর করে বর্ণনা করলে !

      • Piyali basu ghosh

        Reply January 3, 2022 |

        অসাধারণ একটি সম্পাদকীয় দাদা

    • yashodhara Ray Chaudhuri

      Reply January 2, 2022 |

      অসাধারণ একটি সম্পাদকীয় পড়লাম!৷ সত্যিই বিষয় ভাবনাটি অত্যন্ত ঋদ্ধ ছিল তোমার। তাই লিখিয়ে নিল।

    • Tanima Hazra

      Reply January 3, 2022 |

      প্রকৃত সংজ্ঞার খোঁজে।

  • Tanima Hazra

    Reply January 3, 2022 |

    প্রকৃত সংজ্ঞার খোঁজে

  • পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়

    Reply January 3, 2022 |

    সুলিখিত সম্পাদকীয়

  • Anjanaa Chattopadhyay

    Reply January 4, 2022 |

    সম্পাদকীয়টি ভালো লাগলো। তবে এবারের বিষয়টি এতো জটিল ও বহুমুখী যে লিখে কূল পাওয়া মুশকিল! এরকম আরও বিষয়বস্তু প্রস্তাবিত হোক!
    নতুন বছরের শুভেচ্ছা বম্বেduck সম্পাদকমন্ডলি ও তার পাঠকপাঠিকাদের 🙏🏽

Leave a Reply to Kaushik Sen Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loading...