সর্পদেবী মনসা ও দশহরা ব্রত:

অয়ন ঘোষ

মনসার পরিচয় হিন্দু লৌকিক সর্পদেবী। গবেষকদের মতে মনসা কিন্তু প্রাক-পৌরাণিক দেবী। তাই বৈদিক ও সংস্কৃত সাহিত্যে মনসার পরিচয় কিন্তু পাওয়া যায়। মহাভারতের আদিপর্বে মনসার উল্লেখ আছে রাজা জন্মেজয়ের সর্পসত্রের প্রসঙ্গে। সেখানে তিনি ঋষি জরৎকারুর স্ত্রী (যদিও জরৎকারু তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন) ও আস্তিক মুনির মা। ঋকবেদের একটি সুক্তেও মনসা দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়:

ত্রী সপ্ত ময়ুর্যঃ সপ্ত স্বসারো অগ্রু বঃ।
তাস্তে বিষং বিজভ্রির উদকং কুম্ভিনীরিব।।

এর অর্থ “তিন সাত ময়ূরী, সাত ভগিনী যারা কুমারী তারা তোমার বিষ তুলে নিচ্ছে যেমন কলসী কাঁখে মেয়েরা কূপ থেকে জল তুলে নেয়।” এখানে একটা কথা মনে রাখতে হবে মনসা সর্পদেবী হলেও তিনি নিজে সাপ নন। তিনি আরোগ্যের, বাস্তু ও সম্পদের দেবী। আরোগ্যের দেবী হিসেবে তাই তিনি বেদেও স্বীকৃত। অনেক বেদ -গবেষকদের মতে মনসাই সরস্বতী। তাই এঁর নাম ইলা, শ্রী ও পুষ্টি। তিনি সবসময় প্রসন্না কিন্তু তাঁর এই রূপটি লৌকিক বিশ্বাসের আড়ালে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। সেই জায়গায় তাঁর ক্ষমাহীন রূপটি প্রকাশিত হয়। পুরাণকথায় মনসা ঋষি কাশ্যপ ও নাগমাতা কদ্রুর কন্যা। আবার লোক-বিশ্বাস অনুযায়ী মনসা শিবের মানস কন্যা ( ‘মনসা’ শব্দের অর্থ মন থেকে জাত)। প্রথমে পার্বতী তাঁকে স্বীকার করতেন না। পরে শিব-ঘরণী অবশ্য তাঁকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। তাঁর আর যে পরিচয় পাওয়া যায় সেটি হল তিনি নাগরাজ বাসুকির ভগিনী।  এছাড়া তিনি বিষহরি, বিষহরা, নিত্যা, কেতকা ও পদ্মাবতী ইত্যাদি নামেও পরিচিত। প্রধানত বঙ্গভূমি, উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারতে মনসার পুজো প্রচলিত রয়েছে। হরিদ্বারের নিকটে মনসা-পাহাড় নামে একটি পাহাড় রয়েছে। সর্প দংশনের হাত থেকে রক্ষা পেতে, ঐশ্বর্য লাভের কারণে ও প্রজননের জন্য মনসার পুজো করা হয়। মনসামঙ্গল ও পদ্মপুরাণের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মনসা। এছাড়া ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ ও বৌদ্ধতন্ত্রের গ্রন্থে সর্পদেবী মনসা দেবীর উল্লেখ রয়েছে। বাংলাদেশে খ্রিস্টীয় ১৪ শতক থেকে মনসা বিবাহের দেবী হিসেবেও স্বীকৃতি পান। সাধারণ যে কিংবদন্তিটি রয়েছে সমুদ্র মন্থনের সময় শিব বিষ পান করলে সেই বিষের প্রভাব মনসার শরীরে সঞ্চারিত হয় ও তিনি ‘বিষহরা’ নামে জনপ্রিয় হতে ওঠেন। ক্রমে ক্রমে মনসার জনপ্রিয়তা দক্ষিণভারত পর্যন্ত ব্যাপ্ত হয় এবং মনসাকে কেন্দ্র করে যে ধর্মীয় গোষ্ঠীটি প্রভাব বিস্তার করে তা শৈব গোষ্ঠীর প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হয়। শিবের কন্যারূপে মনসার অন্তর্ভুক্তি এরই প্রভাবে। এই কারণে ব্রাহ্মণ্যবাদ বাধ্য হয় মনসাকে হিন্দুধর্মের মূল ধারার সাথে মিশিয়ে দিতে, শিবের কন্যা হিসেবে তাঁর কাহিনী সংযুক্ত করে। আগেই বলেছি আমরা বৈদিক সাহিত্যেও মনসার উল্লেখ পাই। দুর্গম অরণ্যে, মানুষের বিপদে রক্ষাকর্তী তিনি। আবার বাস্তু নাগেদের দেবীও তিনি। মনসা দেবীর সাথে সরস্বতী দেবীর যেমন যোগাযোগ আছে, ( অনেকেই বলেন সরস্বতী বা শ্রী’র বিবর্তিত রূপই মনসা) তেমনই দেবী লক্ষ্মীর সাথে তার যোগাযোগ খুবই স্পষ্ট। লক্ষ্মী ‘কমলা’ নামে পরিচিত, মনসাও পরিচিত ‘পদ্মা’ নামে। পদ্মবনে মনসার উৎপত্তি, লক্ষ্মীর আসন পদ্ম। দেবী লক্ষ্মী সমুদ্র মন্থনের সময় উঠে আসেন আর মনসার জন্ম হ্রদে। সরস্বতী, লক্ষ্মী ও মনসার মধ্যে আরো কিছু মিল আমরা লক্ষ করি। দেবী সরস্বতী অবিবাহিত ( বিষ্ণু বা ব্রহ্মার পত্নী হিসেবে পরিচিতি থাকলেও), অন্যদিকে মনসা স্বাধীন নারীত্বের প্রতিভূ। ঋষি জরৎকারুর সাথে তার বিবাহটি ঠুনকো। সরস্বতীকে তাঁর সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা কামনা করেছিলেন, এদিকে মনসাকে তাঁর মানস পিতা শিব কামনা করেছেন। সরস্বতী বিদ্যার দেবী, মনসা বিষবিদ্যার ( যাকে ইংরেজিতে বলে ophiology) দেবী। সরস্বতী সংগীতের দেবী আবার গান বাজনা ছাড়া মনসার চলে না, তার পুজোয় গান আবশ্যিক। “মনসামঙ্গল” কাহিনীতে দেখি বেহুলা নাচগান করেই মনসা তথা দেবতাদের মন জয় করেছিলেন। পরবর্তীতে দেখা যাচ্ছে বৈদিক যুগ শেষ হবার পূর্বেই মনসা বাস্তু ও লৌকিক দেবীতে পরিণত হয়েছে ও দেবতাদের যে hierarchy তার মধ্যে তাঁর অবনমন ঘটেছে, তিনি দেবসমাজ থেকে বিচ্যুত তাই তাঁকে চেষ্টা করতে হচ্ছে মানবসমাজের মধ্যে পুজো পেয়ে, দেবসমাজের মধ্যে নিজের স্থান পুনরুদ্ধার করতে ( চাঁদ সওদাগরের কাহিনী)।

এবার দেখা যাক মনসার জন্ম কীভাবে হলো। পুরাণ অনুযায়ী মনসা ঋষি কাশ্যপের পুত্রী তথা কাশ্যপ গোত্রজ। আমার মনে হয় মনসা যে শিবের কন্যা এই তত্ত্ব অনেক পরে এসেছে যার উল্লেখ আগেই করেছি। অনেক পরে এসেছে বলার কারণ পুরাণে কোথাও মনসাকে শিবের কন্যা বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। পুরাণ অনুযায়ী সাপ ও সরীসৃপরা একবার পৃথিবীতে অত্যাচার শুরু করলে কাশ্যপ মুনি নিজের মন থেকে মনসার জন্ম দেন। তারপর সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা তাঁকে সাপ ও সরীসৃপদের দেবী নিযুক্ত করেন। এরপর মনসা পৃথিবীতে এসে নিজের প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট হন ও শিবকে তিনি সন্তুষ্ট করেন। অতঃপর শিব তাঁকে বলেন নারায়ণকে সন্তুষ্ট করতে। শিবের উপদেশ মতো মনসা নারায়ণকে সন্তুষ্ট করে তাঁর কাছ থেকে সিদ্ধি নামক একটি বিশেষ ক্ষমতা লাভ করে পৃথিবীতে তার কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকেই মনসার লৌকিক রূপ জনমানসে এতটাই প্রভাব বিস্তার করে যে মনসা কাহিনীগুলি পাঁচালীর আকারে মানুষের মধ্যে প্রচারিত হতে থাকে। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে রচিত বিপ্রদাস পিপ্লাইয়ের “মনসাবিজয়” কাহিনী এরই সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। “মনসাবিজয়” কাব্য অনুযায়ী নাগরাজ বাসুকির মাতা একবার মাটি দিয়ে একটি বালিকার ছোটো মূর্তি তৈরি করেছিলেন এবং তাতে শিব বীর্য নিষিক্ত হলে সেই মৃত্তিকা মূর্তি কন্যার রূপ ধারণ করে ও সেটিই হলো মনসা। বাসুকি মনসাকে নিজের ভগ্নী স্বীকার করে নেন এবং রাজা পৃথু গাভীরুপী পৃথিবীকে দোহন করতে গেলে যে বিষের সঞ্চার হয় সৃষ্টি জুড়ে তার অধিকার মনসাকে দেন। সেই থেকে মনসা বিষের দেবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। মনসা অসাধারণ সুন্দরী ছিলেন। একবার তাঁকে দেখে শিব তাঁর প্রতি আকর্ষণ বোধ করলে মনসা তাঁকে নিজের পিতৃপরিচয় দেন। শিব নিজের ভুল বুঝতে পেরে তাঁকে কৈলাশে নিজের গৃহে নিয়ে আসেন কিন্তু শিব পার্বতীর সংসারে এই নিয়ে অশান্তি তৈরি হয় ও একদিন রাগের বশে পার্বতী মনসার একটি চোখ নষ্ট করে দেন। তাই চাঁদ সওদাগর মনসাকে “চাঙমুড়ি কানি” বলে গালাগাল দিতেন। সেই অশান্তি থেকে বাঁচতে শিব মনসাকে একটি বৃক্ষের নীচে রেখে আসেন যা আজকের দিনে মনসা বা সিজ গাছ হিসেবে পরিচিত। এছাড়া শিব মনসার চোখের জল থেকে নেতা বা নেত্র নামে মনসার সর্বক্ষণের একটি সঙ্গিনী সৃষ্টি করে দেন যার পরিচয় “মনসামঙ্গল” এ রয়েছে। বেহুলা গাঙুরের জলে ভেসে যে পথে স্বর্গে পৌঁছেছিলেন সেই পথে নেতা ধোবানির ঘাট রয়েছে।

মনসার প্রায় গোটা জীবনই দুঃখময়। তাঁর বিবাহিত সম্পর্কেও তিনি সেভাবে সুখ পাননি। তার বিবাহের গল্পটি এই রকম – একবার জরৎকারু মুনি কঠিন তপস্যায় রত হয়ে ঠিক করলেন যে তিনি বিবাহ করবেন না। কিন্তু তপস্যান্তে ফেরার পথে তিনি দেখলেন কয়েকজন মুনি হেটমুন্ড ও ঊর্দ্ধপদ হয়ে গাছ থেকে ঝুলছে। পরিচয় নিয়ে জানলেন এঁরা তাঁরই পূর্বপুরুষ। এঁদের এই অবস্থায় কারণ তারা উত্তরপুরুষদের হাতে জল পায়নি। তখন জরৎকারু ঠিক করলেন তিনি বিবাহ করবেন ও তাঁর সন্তান পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম করে এদের উদ্ধার করবেন। বাসুকি তাঁর ভগ্নী মনসার সাথে জরৎকারুর বিবাহ দেন ও তাঁদের পুত্র আস্তিক। 

আমাদের দেশে পুজোর সময় মনসার যে মূর্তিটি দেখা যায় সেটি সর্প পরিবেষ্টিত নারী মূর্তি, যিনি হংস বা পদ্মের ওপর আসীন। এই দেবী চার হাত বিশিষ্ট, এনার বাহন হাঁস অথবা সাপ। দেবীর ওপরের দুই হাতে পদ্মফুল ও নীচের দুই হাতে থাকে সাপ। সাতটি ফনা বিশিষ্ট একটি সাপ তার মাথায় ছত্র ধরে থাকে। কেউ কেউ বলেন দাদা বাসুকি বোনের মাথায় ছাতা ধরে আছে। কোনো কোনো মনসা মূর্তিতে কোলে একটি শিশুকে দেখা যায়। এটি মনসার সন্তান আস্তিক। এর নাম উচ্চারণে সর্পভয় দূরে যায়। ছোটবেলায় আমরা কোথায় সাপের ভয় থাকলে দিদার কথামতো ‘আস্তিক মুনি আস্তিক মুনি’ নাম জপ করতাম। মনসার ঘটকে মনে করা হয় গর্ভবতী নারীর প্রতীক বা উর্বরতার প্রতীক। তাই মনসাকে প্রজননের দেবী হিসেবে মানা হয়ে থাকে।

আমাদের গাঁ-ঘরে জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা দ্বাদশী থেকে শ্রাবণ মাস ভোর মনসা পুজোর তোর শুরু হয়ে যায়। মনসা পুজো উপলক্ষ্য “মনসামঙ্গল” পালা গীত হয়, একে “সয়লা” বলে। রাঢ় বাংলায়  জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা দ্বাদশীর দিন মনসা পুজো করা হয়। একে বলে দশহরা:

জৈষ্ঠ্য অতি পূজা হব দশরা-দিবসে।।
আষাঢ়েতে হব নাগ পঞ্চমীর পূজা।
ঝাঁপান করিব যত ঝাঁপানিয়া ওঝা।।
শ্রাবণ মাসেতে পূজা লবে খরা তরা।
খই দধি দিয়া লোক পালিবেক চিরা।।
              (“মনসামঙ্গল”)
দশহরা বিশেষ্য পদ, তিথি অনুযায়ী জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা দশমী। এই দিনটি ধরা হয় গঙ্গার মর্তে আগমনের দিন হিসেবে। লোক বিশ্বাস অনুযায়ী এই দিন গঙ্গা স্নান করলে দশবিধ পাপ বা দশজন্মের পাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। সর্প ভীতি থেকে দশহরা ব্রত পালন করা হয়। এর সাথে পঞ্চমী ব্রতও যুক্ত থাকে। এই দিন অনেক গৃহে মনসা গাছের ডাল প্রতিষ্ঠা করে প্রতি মাসের পঞ্চমী তিথিতে পুজো দেওয়া হয়:

নানা কুতুহলে            বঞ্চয়ে সকলে
            জৈষ্ঠ্য মাস পরবেশ
দশমী দশহরা           তিথি যোগ তারা
             শুভক্ষণ সবিশেষ
            (“মনসাবিজয়”, সুকুমার সেন সম্পাদিত)

এই পুজোয় দশ রকমের ফল ও দশ রকমের ফুল ব্যবহার করার রীতি আছে। অনেক মনে করেন দশহরার দিন বৃষ্টি হবেই। এইদিন মাটিতে কৃষকরা কোনো আঁচড় পর্যন্ত কাটেন না, কাটলে মনসা দেবী কুপিত হন বলে বিশ্বাস। মনসা পুজো মূর্তি ছাড়াও ঘটে হয় বা সিজ বা মনসাবৃক্ষে হয় ( আমার বাড়িতে যেমন মনসা বৃক্ষে হয়)। দশহরা ব্রত বা মনসা পুজো করলে মানুষের বিশ্বাস পাপ মুক্ত হওয়া ছাড়া বন্ধ্যাত্বমোচন, সন্তানলাভ, মৃত ব্যক্তির জীবনলাভ, হারানো জিনিস ফিরত পাওয়া, অন্ধত্ব থেকে মুক্তি, কুষ্ঠরোগ মুক্তি সম্ভব। মনসা পুজোর সাথে যুক্ত অরন্ধন। ভাদ্র মাসে এই ব্রতকে বলে “আরফা ব্রত”। এই ব্রতে পান্তা খাওয়ানোর বিধি আছে। পুরুলিয়ায় মনসা পুজোয় হাঁস বলি দেওয়া হয়। দক্ষিণবঙ্গে কোথাও কোথাও ছাগ বলি হয়। উত্তরবঙ্গের রাজবংশীদের প্রধান দেবতা হলেন মনসা। ওখানের প্রায় প্রত্যেকে কৃষকের গৃহেই মনসার থান লক্ষ্য করা যায়। তাই শেষ করার আগে একটা কথাই বলব, সাপ দেখলেই আমাদের মেরে ফেলায় প্রবণতা আছে আর সেটা ভয় থেকেই। সাপ কিন্তু আমাদের যে জীব-বৈচিত্র্য তার একটি অন্যতম গুরত্বপূর্ন স্তম্ভ, তাই একে রক্ষা করা আমাদেরই কর্তব্য। না হলে হয়ত, এমন একদিন আসবে সাপের অভাবে পৃথিবীও বন্ধ্যা হয়ে যাবে আর দেখা দেবে খাদ্য সংকট। আমার কেন জানি মনে হয় এই কারণেই সর্পদেবী মনসাকে প্রজননের ও বন্ধ্যাত্ব মোচনের দেবী হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

তথ্য ঋণ:
বাংলার ব্রত পার্বণ – শীলা বসাক
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস – অসিত কুমার বন্দোপাধ্যায়
অন্তর্জাল
লোক মুখে শোনা গল্প

Write a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loading...