সম্পাদকীয়
অর্ঘ্য দত্ত

২০১৬-র আগস্ট থেকে ২০২২-এর জুন, এই ছ’বছরে টানা কুড়িটা অনলাইন এবং তিনটে কাগজেছাপা বইমেলা সংখ্যা প্রকাশ করার পরে একটা অনতিদীর্ঘ বিরতি নিতে বাধ্য হয়েছি আমরা। হ্যাঁ, আমি নই, আমরাই। এই ‘আমরা’ কোন ট্রাস্ট নয়, সোসাইটি নয়, প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি নয়, পার্টনারশিপ ব্যবসাও নয়। তবু যে একটা পত্রিকাকে ঘিরে মুম্বাইয়ের মতো আদ্যন্ত এক বাণিজ্যিক শহরে এতজন বাঙালি বিনা কলহে, বিনা মনান্তরে, বিনা স্বার্থের সংঘাতে এতগুলো বছর অসূয়াহীন নিবিড় সান্নিধ্যে কাটিয়ে দিতে পারলাম তার একমাত্র কারণ এই যে সংশ্লিষ্ট মানুষগুলোর অকৃত্রিম সাহিত্যচর্চার রুচি ও তৃষ্ণা ছাড়া অন্য কোন গুপ্ত উদ্দেশ্য ছিল না। এখনো নেই। তাই এই পরিসরে নতুন নতুন এমন অনেক ব্যক্তি যুক্ত হচ্ছেন যারা অবসরে তাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলা ও তার কারুকাজ, তার রস ও ভাবের ঘোরে ডুবে থাকতে চান। গোদা কথায় সাহিত্যচর্চায় আছে তাদের নিখাদ শখ ও সাধ। আর সাধ্য? কে না জানে সৎ পরিচর্যা এবং অনুশীলনের মাধ্যমে সাধ্যের ঘাটতিগুলোকেও হয়তো একদিন ডিঙিয়ে যাওয়া যায়। সেই বিরল পরিচর্যার, চর্চার পরিসরটুকু আজ এই শহরে বম্বেDuck তৈরি করতে পেরেছে। পরিসর বিস্তৃত করার প্রচেষ্টা জারি রেখেছে। আর সেই কারণেই নানান প্রতিকূলতা ও অসহযোগিতা সত্ত্বেও আবার ফিরে এসেছি আমরা। কিছু দেরিতে হলেও।
কিন্তু এসেছি বড় নিরাভরণ। অলংকরণ করা গেল না। অন্যান্য ওয়েব পত্রিকাগুলো যখন নতুন নকশায়, রঙে-চঙে, সাজে-সজ্জায় অভিনব হয়ে উঠছে, বম্বেDuck প্রকাশ করতে হলো বড়ই সাদামাটা ভাবে। তবে শ্লাঘা যে অনেক নবীন কবির লেখা প্রকাশ করতে পারছি, খুঁজে পেয়েছি নীলম হাজরা বা শুভদীপ মাইতির মতো এই শহরের উপকন্ঠে বসে নিভৃতে কবিতা-চর্চা করে চলার মতো তরুণদের।
আমরা জানি গত দু-এক বছরে অনেক প্রিয় কবি-লেখক এই ধুলোমাটির পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। অসময়ে। আমাদের অব্যবহিত আগের সংখ্যাটাই করা হয়েছিল তেমনি অকালপ্রয়াত দুই লেখক-সম্পাদক অজিত রায় এবং সুকুমার চৌধুরীর স্মরণে। এই সংখ্যার সূচীর সূত্রপাত করলাম নতুন বিভাগ ‘পুনর্পাঠ’ দিয়ে। বম্বেDuck-এর বইমেলা সংখ্যাগুলো থেকে বেছে নিলাম এমন তিনজনের লেখা যারা আমাদের ছেড়ে হঠাৎ চলে গেলেন অপ্রত্যাশিতভাবে। কবি-লেখক, ব্যতিক্রমী ও বিতর্কিত দুই চিন্তাবিদ প্রবুদ্ধসুন্দর কর ও অমিতাভ প্রহরাজ। এছাড়াও প্রিয় কবি প্রণব বসুরায়। এঁরা যে শুধু বম্বেDuck-এর জন্য লিখেছিলেন তাই নয়, ব্যক্তিগতভাবেও তিনজনেই ছিলেন আমার পরিচিত এবং সুহৃদ। পুনর্পাঠের মধ্যে দিয়েই ওঁদের স্মরণ করলাম।
বম্বেDuck প্রকাশে বিলম্ব হওয়াতে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে যাদের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছিল তাদের জানাই, বম্বেDuck প্রকাশের ব্যাপারে আমরা দৃঢ়প্রত্যয়ী। বম্বেDuck ভবিষ্যতেও শুধু যে নিয়মিত বছরে তিন-চারটি সংখ্যা প্রকাশিত হবে তাই নয়, একই রকম ভাবে আয়োজন করা হবে এর বার্ষিক অনুষ্ঠান। যে অনুষ্ঠানে অতীতের রীতি মেনে বিশেষ অতিথি হিসেবে এই শহরের বাইরে থেকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কোনো বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিককে। অনুষ্ঠানে প্রদান করা হবে ‘প্রবীর রায়চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ‘সংঘমিত্র সাহিত্য পুরস্কার’।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করি, এই সম্মান-পুরস্কার গুলি অতীতে প্রদান করা হয়েছে কথাসাহিত্যিক আনসারউদ্দীন, লেখক-কবি অশোক দেব, বুদ্ধদেব হালদার এবং তন্ময় ভট্টাচার্যকে। আশা করছি এবছরেও এপ্রিল মাস নাগাদ আয়োজন করা হবে ২০২৩-এর অধিবেশন।
কবি-লেখক বন্ধুরা বম্বেDuck-এ লিখুন, আপনার বন্ধুদের বম্বেDuck পড়ান। সমস্ত শুভানুধ্যায়ী ও পাঠক বন্ধুদের জানালাম নতুন বছরের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা।
(প্রচ্ছদ এবং সম্পাদকীয়তে ব্যবহৃত ফটোগ্রাফ: নীলাদ্রি ধাড়া।)