শোক ও বিষাদ
অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়

কিভাবে যে সমস্তটা বলা যায়, এখনও শিখিনি
আসলে জলের মুঠি, দিনশেষে কিছুই থাকে না
তবুও শব্দের খোঁজে আমার এই নিত্য মাধুকরী
ফলাফলহীন, শুধু দিনে দিনে বেড়ে চলে দেনা।

কাকভোরে অস্ফূট ফিসফাস শুনে পাশ ফিরি
শিয়রের কাছে কে যে পড়ে কোনো বিশুদ্ধ কবিতা
কি জানি কী ভাষাহীন ধ্বনিসাম্যে বোধের উদ্ভাস
ভাবি জেগে উঠলেই ভরে যাবে ডায়েরির পাতা।

কিন্তু সাড়ে সাতটায় ঘাসে আর শিশির থাকে না।
ডায়েরির ভাঁজে ভাঁজে জমে শুধু পাণ্ডুর ফার্ন।
শোকের শুশ্রুষা শেষে, বিষাদ খঞ্জর এসে কাটে
নেই কবিতার নাভি পদ্ম আলো-করা পরিত্রাণ। 


মাটকোঠার ঘরে খেপী থাকে। একলা গিয়ে পড়তে নেই কখনো। ঠাকুমার পইপই মানা সত্ত্বেও হৃদয় গেছিল একদিন। খেপী চমকে তাকিয়ে ছিল, তার কালিপড়া কোটরের চোখ, জিভ বেরিয়ে আছে। ভয় নয়, শুধু তার দুর্বোধ্য কান্নার স্বরে মনে হয়েছিল কেউ যেন তাকে যাঁতা বেঁধে নামিয়ে দিচ্ছে পাতকোয়। কে যে ডাকছিল, চলে আয়, ফিরে আয়….

মাঝবয়েস, এতদিনে হৃদয়ের শোক চেনা হয়ে গেছে। ক্ষুদ্ধ চোখ দুটি, নীল মুখচ্ছবি..খেপীর মতন নয় কিছুতেই। যতই দুর্বহ বিষে ব্যতিব্যস্ত হোক, বন্ধু ছিল, আত্মীয়-স্বজন।

কিন্তু আজ প্রথম বর্ষার এক্সপ্রেসওয়ে। সমস্ত আকাশ খেপীর চোখের মত কালো। খেপীর কান্নার মত বৃষ্টির উড়ুনি ভেসে যায়। খাদ থেকে, পাহাড়ের দিকে।

বৃষ্টি পেরিয়ে মাটকোঠার ঘরে খেপী থাকে। নিষাদিনী ডাকে, চলে আয়, ফিরে আয়….

3 Comments

  • উত্তম বিশ্বাস

    Reply June 29, 2023 |

    “ক্ষেপির কান্নার মতো উড়নি ভেসে যায় খাদ থেকে পাহাড়ের দিকে!”

    আহা অপূর্ব!

  • Pradip Roy Chowdhury

    Reply June 30, 2023 |

    “আসলে জলের মুঠি, দিনশেষে কিছুই থাকে না
    তবুও শব্দের খোঁজে আমার এই নিত্য মাধুকরী”

    কবিতার শুরুতেই অরিন্দমের এই দুটি লাইন অনবদ্য ।
    শেষের স্তবকে ক্ষেপীর উপাখ্যান হৃদয় মথিত করে ।
    খুব ভাল লেখা।

  • Sukanta Dey

    Reply July 1, 2023 |

    ২য়টি ভীষণ ভালো লাগল

Write a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loading...