যেখানে সবাই অন্ধ
মূল ওডিআ গল্প : অনিল কুমার পাঢী
অনুবাদ : শ্যামলী সেনগুপ্ত
গামছার ভেতর দিয়ে গেরস্থের কালো রঙের পাছা দেখা যাচ্ছিল। নিজের নির্লোম বুকে হাত বুলিয়ে পলকহীন চোখে সে তাকিয়ে ছিল নিজের বৌ-এর দিকে। ওরা সবাই তাকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে হাত দুইটি পেছনের দিকে বেঁধে রেখেছিল। এখন গ্রামের রাস্তায় একদল ছোকরা, সামনে ওর উলঙ্গ বৌ। বৌ-এর ঝুঁকে যাওয়া ঘাড় ধরে একটা ছেলে ‘ডাইনি’ ‘ডাইনি’ বলে চিৎকার করছিল। সারা গ্রামে মারা গেছে তিনটে ছাগল, দুটো গরু,পাঁচটা মুরগি আর তিনজন বাচ্চা। ঠাকুরাণীর সামনে সাষ্টাঙ্গে ধর্ণা দিয়ে নায়েক বুড়ো শুনিয়েছিল চরম বাণী, উলঙ্গ করে ডাইনিকে সারা গ্রামে ঘোরাও। সেই নির্দেশ মহাড়ম্বরে পালন করা হচ্ছিল। আদিবাসীদের বাদ্যযন্ত্রে ঐ অঞ্চল কেঁপে উঠেছিলো। এই ডাইনি খড় ফেলে রক্ত শুষে নেয়! পা উপরে মাথা নীচে দিয়ে গু খায়! এই ডাইনি টিকটিকির মতো দেয়াল বেয়ে ওঠানামা করে। সে চুপচাপ হাঁটছে। শিশুরা অবাক চোখে তাকিয়ে!অবিবাহিত ছেলেপিলে উশৃঙ্খল! একে নারী শরীর, তায় উলঙ্গ! বৃদ্ধ ও বয়স্করা কামনাসক্ত! সন্ধে হয়ে আসছে। ওরা দরজার কাছে ওকে ফেলে দিয়ে গেল। বৌ-এর শাড়ি এনে গেরস্থ ওর উপরে ফেলে দিল। বৌ দুই হাত দিয়ে শরীর থেকে কিসব ঝেড়ে ফেলছিল।বললো, দেখ্! জোঁকের মতো শরীরে শয়ে শয়ে চোখ আটকে আছে। আঙুলগুলো কাঁটার মতো আমার শরীরে ফুটে আছে। ও পড়ে থাকা শাড়িটা দিয়ে ভালো করে শরীর ঝাড়তে লাগলো।চিৎকার করে উঠলো, এসব সরা, হটাও এসব! আমার শরীরে নুন হলুদ মাখিয়ে দে। তারপর ও হাসলো। নিজের হাত কামড়ে রক্ত খেল। পা দুইটি উপরে উঠিয়ে ও মাথা নীচের দিকে করে হাঁটতে লাগলো। চিল চিৎকার করে বলতে লাগলো, আমি ডাইনি! আমি ডাইনি!
বেচারা গেরস্থ পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। ভোরের দিকে চোখ আর আঙুলগুলো বৌয়ের শরীর থেকে ধীরে ধীরে খসে পড়তে লাগলো।মনে হয় নিজেকে খুব হালকা মনে হচ্ছিল ওর। ও ঘুমিয়ে পড়ল।
*****লেখক পরিচিতি : অনিল কুমার পাঢী ওডিআ কথাসাহিত্যের একজন খ্যাতিসম্পন্ন লেখক। তার গল্পগুলি স্বতন্ত্র ও পরিক্ষাধর্মী। রয়েছে সতেরোটি গল্প গ্রন্থ, পাঁচটি উপন্যাস এবং ১২১টি অণু গল্পের একটি সংকলন। পেশায় ইংরেজির অধ্যাপক এই লেখক সম্মানিত হয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কারে।