বার্টোল্ট ব্রেখট-এর দুটি অনুবাদ কবিতা
হিল্লোল ভট্টাচার্য

নির্বাসনের আয়ু

(On the term of exile)


দেওয়ালে পেরেক গেঁথো না তুমি—

টুপী টাঙানোর কথা ভেবে; কী লাভ?

ঘরে ঢুকে শুধু ধুলো ঝেড়ে চেয়ারের ওপর রেখে দিও

কেউতো বসে না আর—

কে আসে এখানে?  

ফুলগাছগুলোর গোড়ায়

জল দেওয়া হয়েছে কি আজ?

দুশ্চিন্তা কোর না— !

আরো ভালো হয় যদি রোপণই না কর

তুমিওতো ফিরে যাবে

থাকবেনা চোখ মেলে ফুলফোটা দেখতে এখানে; তবে—

কেন? কার জন্য? কে চায় ওদের? 

নতুন ভাষাটি বুঝি বড়ই দুরূহ?

ধৈর্য ধোরো তবে—

ফেরার আকুতি ভরা তারখানি এলে

জেনে যাবে— অনুবাদ কতদূর অর্থবিহীন!

ছাদ থেকে প্লাস্টার খসে এলে পরতে পরতে

যে দেওয়াল সাক্ষী ছিল বহির্গমনে

সেও ধ্বসে পড়ে দ্রুত

আরো দ্রুত, দ্রুততর হয়ে।

কেউ না অথবা আমরা সবাই

(All of Us or None)


ক্রীতদাস, কে তোমার মুক্তিদাতা?

গহন গহনতম অন্ধিকৃত যারা

সাথী, তোমাকেই একদিন খুঁজে নেবে তারা  

শুনে নেবে একান্ত গোপন এ কান্নার স্বর;

সঙ্গী, শুধু ক্রীতদাসই তোমার ত্রাতা।

সবটুকু কিম্বা কিছুই না, কেউই না নচেৎ আমরা সবাই

একলা সুখের পথ আজকে বিকল

বেছে নাও বন্দুক অথবা শিকল

হয় সকলে কিম্বা কেউ নয়; হয় কিচ্ছু না অথবা পুরোটাই। 

ক্ষুধাতুর, তোমাকে খিদের রূঢ় দিনে

কে দেবে দুমুঠো ভাত, দুটো রুটি  কিনে?

আমাদের সাথে এসো, আমরাও খিদে নিয়ে বাঁচি

আমাদের পাশে থেকো, এ লড়াইয়ে তোমার সাথে আছি

এক ক্ষুধার্ত মুখ অন্যের খিদে নেবে চিনে।

সবটুকু কিম্বা কিছুই না, কেউই না নচেৎ আমরা সবাই

একলা সুখের পথ আজকে বিকল

বেছে নাও বন্দুক অথবা শিকল

হয় সকলে কিম্বা কেউ নয়; হয় কিচ্ছু না অথবা পুরোটাই। 

পরাজিত, কে নেবে তোমার প্রতিশোধ?

মার খেতে খেতে প্রায় আধমরা প্রাণ,

শোনোনি কি আহত ভাইয়ের আহ্বান?

আমাদের দুর্বলতা নতুন অস্ত্রে ঢেলে নিয়ে

আমরা গাইবো আজ বদলা ও বদলের গান। 

সবটুকু কিম্বা কিছুই না, কেউই না নচেৎ আমরা সবাই

একলা সুখের পথ আজকে বিকল

বেছে নাও বন্দুক অথবা শিকল

হয় সকলে কিম্বা কেউ নয়; হয় কিচ্ছু না অথবা পুরোটাই। 

লড়াইয়ের সাহস দেখাবে আজ কারা?

সহ্যের সীমান্ত শেষে দাঁড়িয়ে যে ওই সর্বহারা

যতটা জখম তার, অস্ত্র আজ তত বলশালী

দুঃখের আগুনে পুড়ে ইস্পাত হয়েছে যে— সেই

আজকেই আঘাত হানো, কাল বলে আর কিছু নেই। 

একটুও না কিংবা সবকিছু চাই

হয় কেউ না অথবা আমরা সবাই ।

মূল কবি পরিচিতি

 বার্টোল্ট ব্রেখটকে ((10 February 1898 – 14 August 1956) আমরা মূলত নাট্যকার ও নাট্যব্যক্তিত্ব হিসেবে চিনলেও কবিতায় তাঁর অবদান নেহাত কম নয়। জন্মগত ভাবে জার্মান, ব্রেখট দার্শনিক নিৎশের দ্বারা গভীর ভাবে প্রভাবিত ছিলেন। থ্রি পেনি অপেরা, মাদার কারেজ অ্যান্ড হার  চিলড্রেন, রেসিস্টিবল রাইস অফ আর্তুরো উই ব্রেখটের সুপ্রসিদ্ধ নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম। মার্ক্সিয় ভাবধারায় দীক্ষিত ব্রেখটের নাটক ও কবিতায় তাঁর সমাজ চেতনা, সে সময়ের বার্লিন এবং যুদ্ধ বিধস্ত বিশ্বের ছবি ফুটে ওঠে। শাসক বিশেষত একনায়কের নানান রূপ দেখা যায় তাঁর সৃষ্টিতে।  থিয়েটারে V এফেক্ট এর প্রবক্তা তিনি, যা দর্শককে এক ধরণের অ্যালিয়েনেশন বা ডিস্ট্রাকশন এনে দেয় ঘটমান অভিনয়ের থেকে।  প্রসঙ্গত ব্রেখট নিজে ১৯৩৩-৪১ নির্বাসিত ছিলেন ডেন্মার্ক্ এবং ফিনল্যান্ডে।

2 Comments

  • গোরা চক্রবর্তী

    Reply June 30, 2023 |

    বার্টোল্ট ব্রেখট যে একজন সার্থক কবি, হিল্লোল ভট্টাচার্য মহাশয়ের অনুবাদের মাধ্যমে সুন্দর ফুটে উঠেছে।

  • দেবলীনা

    Reply June 30, 2023 |

    অসাধারণ অসাধারণ

Write a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loading...