দুটি কবিতা
তিস্তা চক্রবর্তী

যোগাযোগ

যতখানি দীর্ঘ ছায়া মেলেছে সময়,
তারও পরে আরও কিছু পড়ে ছিল 
অবিন্যস্ত যোগাযোগ।

শীতের ঝরে যাওয়া
খয়েরি পাতার শুকনো ঠোঁট থেকে
খসে গেছে সমস্ত চাতুরী—
খুব শান্ত চোখে এখন বলা যায়,
“তোমাকে চেনা দুঃখের মতো পড়তে পারি আমি…”

কমলা রোদের মতো হেঁটে এসেছো নিটোল,
হাত রেখেছো রোগাভোগা বুকের কোটরে—

প্রথম দিনের দ্বিধা
জ্বরে-পড়া মানুষের কাঁপুনির মতো
ফিরে ফিরে আসে,পাতাবিহীন গাছ-শরীর থেকে 
গুমরিয়ে ওঠে কবিতার অস্ফুট আব্দার,  

“এত লিখে কী-ই বা হবে বলো তো…!”

মাথার মধ্যে দাউদাউ অনন্ত চাঁদ
অকারণ ঘুম পায়, খুব!
মনে মনে বলি, আর কয়েক ঘন্টা মাত্র…
তোমার স্পর্শের কাছে ঠিক রেখে দেব 
ভাঙা সন্ধির উপমা,
দু’চারটে অসফল আঁচড়,
যতিচিহ্নহীন

এই রুখাসুখা শীতের শহরে
ভালোবেসে ততক্ষণ জড়িয়েই রাখলে না’হয়…


অ্যালঝাইমার

ভুলে যাওয়ার এক বিচ্ছিরি অসুখে পেয়েছে আমায়।

চশমা, রিস্টওয়াচ, মোবাইল ফোন, ব্যাংকের পাসবই, বাজারের ফর্দ, প্রেসারের ওষুধ…
একে একে ভুল হয়ে যাচ্ছে সবই;
এঁটো কাপ বারকয়েক মেজে ফেলার পরেও 
হঠাৎ মনে পড়ে যাচ্ছে…
আজ তো সকাল থেকে চা খাওয়াই হয়নি!

যে রাস্তাটা স্টেশনের দিকে চলে যায় রোজ
সে রাস্তাই ঘরের দরজায় ফিরিয়ে আনে কিনা,
বুঝে উঠতে হিমশিম খাই অবিরত—

চাঙ্গে ফলসের হুহু জলের শব্দ
গভীর ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয় বারবার,
নামতে
         নামতে
                  নামতে
                             নামতে
একসময় বুঝতে পারি 
শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে আছি… বহুক্ষণ!

জল গায়ে শীত চেপে বসে,
ভুলে যাওয়া আদরের মতো…

যার সাথে নিরন্তর ভুল বোঝাবুঝি
তাকে রোজ নতুন-নতুন নামে ডাকি—
ঘরে কেউ নেই, কেউই নেই আর 

ভুলে যাওয়ার আশ্চর্য অসুখ ছাড়ে না কাউকেই…!

হাওয়া ফিরে ফিরে ডাকে,
মূর্তি নদীর মতো নুড়ি-পাথর বিছানো বুকে
কবুতরী মেঘ
             ঝুপ করে
                        নেমে আসে—

সুখ ও বিষাদের চিরন্তন প্রবাদে
থিতু হবার প্রেসক্রিপশন খুঁজি,

মুখোশের কাছে ঋণস্বীকার জানাতে ভুল হয়ে যায়

Write a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loading...