তিনটি কবিতা
শুভদীপ মাইতি

১.

নোনাচাতর

প্রিয় মানুষটি নারী হয়ে উঠতে পারেনি বলেই

আমার উপকূল জুড়ে ফুটতে থাকে নুন।

শিমুল গাছের থেকে বারংবার উড়ে যাচ্ছে অতৃপ্ত ইচ্ছেরা

প্রতিটি মৌনতার বাঁকে ঝরে পড়ছে মৃত কথাদের বৃষ্টিপাত

কবি লুকিয়ে রাখেন আকস্মিক স্পর্শ

ভেতরে ভেতরে নিজের ক্ষয়ে যাওয়া।

কতো আকরিক ও প্রাচীন জীবাশ্ম ছড়িয়ে থাকে কবির উপকূল জুড়ে

একটি নড়বড়ে সেতু ও টান, টুক করে ভেঙে গেলে

নোনাচাতরের অগ্রভাগে নেমে আসেন ঈশ্বর

কবি এবং ঈশ্বর পরস্পরকে বোঝাচ্ছেন

‘মহাশয় আপনিই শ্রেষ্ঠ’।

২.

পথ

সাঁকোর ওপারে নদীর সমস্ত স্রোত নতজানু রেখে

লবন হ্রদের দিকে মাথা নিচু করে চলে গেল বিষন্ন বালক

তার চলে যাওয়ার পথে একের পর এক

জেগে উঠছে চর

এই পথে পায়ের স্পর্শ রেখে গেছেন নিত্যানন্দ মহাপ্রভু

হয়তো বহু বছর পর, কবির ছেলে এপথেই

খুঁজতে আসবে কবির জখম ও মৌনতা সমূহ

অপেক্ষা আসলে মহাশূন্য, গরীবের ক্ষিদের মতন

পথ এক অনিবার্য গতি। চলতে থাকে, চলতেই থাকে

এখন তোমার পোট্রেটের সামনে বসতেই

ফেলে যাওয়া পথের সমস্ত বাঁকে

খই ফুটছে

৩.

কপালকুণ্ডলা

শুধুমাত্র ব্রহ্মকে ছুঁতে গিয়ে একটি টাটকা জখম দেগে দিলো

দরিয়াপুরের অক্ষরবৃষ্টি ও বঙ্কিম চাটুজ্যে

বুকের ভেতর যখন মৌসিনরাম

কাঁথি পেটুয়াঘাট ট্রেকারের

প্রতিটি সিটে জেগে উঠছে যত্নহীন মৌনতা

দৌলতপুর হসপিটাল পেরোনোর সময় দুচোখে ভ‍রে আসে জল।

বেনারসী শাড়ির ঘোমটায়

বড় পিসিকে প্রথমবার ছেড়ে গেল যে ছেলেটি

শুধুমাত্র মানসিক অসুখ নিয়ে

শুক্র গ্রহটির মতো উপন্যাসের কপালকুণ্ডলায় মিশে যাবে

ভাবতেই পারেনি

অনেক দূরে জলযাত্রায় যে ব্যস্ততা

ইতিহাসের প্রাচীন ছুঁয়ে নির্ভুল কম্পাসের মতো

সংকেত পাঠাচ্ছে লাইট হাউস।

আর আমি উপন্যাসের পাতায় পাতায় তোমাকে ছুঁতে চাইছি

তুমি কপালকুণ্ডলা হয়ে ফিরে এসো পিসিমনি

তোমাকে আগলে রাখুক বঙ্কিমচন্দ্রের একান্ত উঠোন

Write a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loading...