তিনটি কবিতা
চন্দ্রনাথ শেঠ
ঝাড়লন্ঠন
এই সেই দালানকোঠার ঝাড়লন্ঠন। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সব অন্ধ করে দিয়েছে নিজেদের। আজ দিনভর
পাগল হয়ে রয়েছে টেম্পোরারি পাইপলাইট। এই সেই ঝাড়লন্ঠন চোখে দেওয়া কৈশোর; যা থেকে ঠিকরে
আসে জোনাকিরা… উড়ে উড়ে বাড়ি জাগায়…
তিন তোলায় আটকে থাকা এই সেই ঘুড়ি ও তার মাঞ্জা সুতো…সাতপুরুষ ধরে’এই তো
বেনিআসহকলা-র রামধনু’ …
দেখায়, বাড়ির নাতনিদের নাভিকূপ থেকে জন্মানো নদী—গিয়ে মিশছে হাইড্রেনে…
নদীতীরের চিরকেলে কাশবন এই সেই
দাউদাউ জ্বলছে আসন্ন শরতে…
লায়েক নাতিরা নদীর বালিতে নামিয়ে দিয়েছে এই সেই খেলনা ডাম্পার…ডাকাবুকো দশচাকা
চষে ফেলছে একটা গোটা
সভ্যতা…
বেপাড়ার খদ্দের এসে—কিনে দিয়ে যাচ্ছে দাহখই, রুগ্ন গোলাপবালা-রজনীগন্ধার মালা, দাহ-খাট
নুনছাল ওঠা ঘাড় মটকানো এই সেই বাড়ি—সন্ধ্যায় বাপঠাকুরদার কোলে বসলেই উড়ে আসত—ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমি।
শলাপরামর্শ শোনা যেত—রাক্ষসী স্বর্গরথ কী ভাবে গিলে ফেলছে
গোটা দালানকোঠা দশচাকার ডাম্পারে…
গোধূলিলগ্নে
নামাজ আদায়ের ভঙ্গিতে বসে পড়েছেন সূর্য। হাট-ভাঙা আনাজ আজকের মতো কুড়িয়ে
নেবে; ওঁত পেতে ওই ডিএ-বোনাস-মাইনেহীন হীনযান…
ফালি চাঁদের হাসি হয়ে ফুটে রয়েছে নীলকন্ঠ; ওকে সকাল থেকে মহার্ঘভাতা শেখাচ্ছেন
দামী গোলাপ। কাছেই বাড়িতে কেওড়াজল দিচ্ছে পলান্নয়
কাদের কিশোরী তুমি, নাক উঁচু করে গুনছ ক-পল, ক-সেকেন্ড, ক-ঘন্টা বাদে শুরু হবে পাতা
ফেলা…
আকালের সন্ধানে
ধানচাষির গল্পে ইদানীং জনকনন্দিনীর হল উত্থান নেই
সমগ্র বীজতলা জুড়ে—বহুজাতিক ট্রাক্ট্রারের রোবট ঘর্ঘর
এইমাত্র শ্রাবণ আকাশে হ্যালিকাপ্টারে ধ্যান্যবৃষ্টি…আঁটকুড়ো শ্রাবণ
জুড়ে পোষা কৃত্রিম মেঘের আনাগোনা…
চাষিবৌ আশ্চর্য হয়ে দেখছে–সারা দিনমান…
ফোটার ইচ্ছে জাগছে না একগাছ কদম্ব-কুঁড়ির
মত্ত দাদুরি সঙ্গম ভুলে হাই তুলছে অনর্গল…
গ্রামসড়ক যোজনার বরাদ্দ টাকায়, বিদেশমন্ত্রক দরদাম করছে
দাপুটে দেশের সঙ্গে সজল মেঘের…কি জানি বাপু, ঠাকুরের বর্ষার
গানেও লাগছে নাকি ঠিকঠাক সুর-তাল-লয়