ট্রাপিজ সংসার
শ্রাবণী চৌধুরী
এক
চোখে আমার আগুন জ্বলে, আগুন জ্বলা চোখ
ভুল ভেবেছি নিভে গেছে যত দুঃখ শোক।
রেখেছ হাত বুকের মাঝে, বলেছ ভালোবাসা
শিরায় শিরায় বিষ ঢেলেছ এমন সর্বনাশা।
চেয়েছিলাম একটু সুখ, একটুখানি আলো
ঠিক তখুনি মেঘলা আকাশ, আঁধার হয়ে এলো।
দুই
আকাশ মেঘলা হলে দরজা খোলে স্মৃতি
হাওয়ায় উড়তে থাকে ফেলে আসা গন্ধ
অনন্ত বিষাদ জড়ো হয় এক উঠোনে।
বিছানায় এসে উপুড় হয় ক্লান্ত শরীর,
জরুরী কাজ পড়ে থাকে খোলা জানলায়
ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে ওঠে প্রিয় বৃন্দাবনী সারং
লুকোনো কথার ভারে মন –
গেয়ে ওঠে নিরালায়।
সেই কবেকার অলস দুপুরে নূপুর বাজিয়ে
ঘাটের পথ ধরেছিল যুবতী বধূ,
যাবতীয় কলঙ্ক অলঙ্কার ছিল তার,
একদিন ঝাঁপ দিয়েছিল জলের গভীরে অথচ,
ভরা যমুনায় ডুবসাঁতারে উঠেছে সে কানু বিনে
যে বাঁশীর সুরে শুনেছিল মধুর রাধা ডাক
সে বাঁশীতে ঘুন ধরেছিল-
ফিরেছে সে পথ চিনে।
তিন
কতখানি পথ এগিয়ে গিয়ে পিছনে ফেরা যায় ভাবার মতো জোর নেই তোমার, বাঁধন শক্তপোক্ত করতে গেলে রশি কতখানি আলগা রাখতে হয় তাও জানলে না কোনোদিন!
আমি চেয়েছিলাম দু’হাত ভরে বকুলের গন্ধ লেগে থাক পুরোনো সম্পর্কের আনাচে কানাচে। তুমি জোর করে সেই বস্তাপচা লাল গোলাপের গন্ধ এনে ফেললে ভিতর ঘরে। অথচ, নিজেই জাননা বুকের গভীরে কত চেনা গন্ধ জমা থাকে পরতে পরতে।
কৃষ্ণচূড়ার গনগনে আগুন দেখতে দেখতে আমি খেলা করি রুদ্রপলাশের বনে, উদ্ধত পলাশের সামনে দাঁড়িয়ে আমার শিমুলের কথা মনে হয়, তুমি জানতেও পারোনা।
ভেবেছিলে বেতসলতার মতো জড়িয়ে থাকবো সারাজীবন, -এই মারাত্মক ভুলের কথা আত্মসাৎ করে হেসে ওঠে আকাশে একফালি চাঁদ, ধূর্ত চোখের মতো।
চার
চোখ বন্ধ করলেই আজকাল মৃত্যুর হাতছানি।
সব রহস্য রোমাঞ্চ ম্লান করে জীবনের চরম সত্য এখন মৃত্যু।
হেজে যাওয়া জীবন বেশ চনমনে মৃত্যুভয়ে।
আয়নার সামনে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে বেশ লাগে, নিত্যনতুন ম্যাচিং মুখোশ।
“বড়ো একা লাগে এই আঁধারে”-গাইতে গাইতে ক্লান্ত যে মেয়েটা সাদা থান জড়িয়েছিল যুবতী শরীরে -সে এখন রাত-বিরেতে ঘুরে বেড়ায় খোলা মাঠে, ভরা অমাবস্যায়।
মেয়েটা নিজের মনেই হাসে আর দু’হাত বাড়িয়ে জোনাকিদের ডাকে, “কাছে আয়, কাছে আয়”।