জার্মান লেখিকা ইর্মগার্ড কিউনঃ যিনি নিজের মৃত্যু সংবাদ রটিয়েছিলেন

অদিতি ঘোষ দস্তিদার

“কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই!” এই লাইন বাঙালির অতি পরিচিত। কুসংস্কারাচ্ছন্ন সামন্ততান্ত্রিক সমাজের প্রতি তীক্ষ্ণ বিদ্রুপ হেনেছেন লেখক এই কাদম্বিনী চরিত্রের মাধ্যমে। আত্মহত্যা করে কাদম্বিনী বুঝিয়ে দিয়েছিল যে সে আগে মরেনি। কাদম্বিনী রবীন্দ্রনাথের সৃষ্ট এক চরিত্র। গুরুদেবের জানা ছিল না, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাংলা থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে জার্মানির এক লেখিকা নিজের আত্মহত্যার খবর রটিয়ে আত্মরক্ষা করেছিলেন প্রবল প্রতিপক্ষ হিটলারের ফ্যাসিস্ট বাহিনীর কাছ থেকে! নাম তাঁর ইর্মগার্ড কিউন, যিনি মারা গেছিলেন আত্মহত্যার মিথ্যা খবর প্রকাশের আরো বিয়াল্লিশ বছর পরে!

প্রদীপ জ্বালানোর আগে সলতে পাকানোর কাজটা না করলে তো চলে না, তাই শুরু করি একটু আগে থেকে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ের জার্মানির পরিস্থিতি আলোচনা থেকেই আরম্ভ করা যাক। সারা জার্মানি জুড়ে তখন এক অভূতপূর্ব জোয়ার। জার্মানির নৌ সেনা আর স্থলসেনা যৌথভাবে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে জার্মান সম্রাট কাইজার উইলহেলমের বিরুদ্ধে। সম্রাট গদিচ্যুত। ভোটে জিতে এল নতুন রিপাবলিকান সরকার। ওয়াইমার রিপাবলিক! 

এ জয় মানুষের জয়! সত্যের জয়, বন্ধুত্বের জয়, শিল্পের জয়! 

শিল্প ভাবনায় নব দিগন্ত! নতুন নতুন চিন্তায়, আঙ্গিকে মানবতার জয়গান ধ্বনিত হতে লাগল সাহিত্যে, শিল্পে। ইমগার্ড কিউন( Irmgard Keun) ছিলেন ওয়াইমার যুগের একজন বলিষ্ঠ লেখিকা। আর্থিকভাবে সচ্ছল,জার্মানির এক উদার পরিবারের মেয়ে কিউন। ছোটোবেলা থেকেই পেয়েছেন স্বাধীনভাবে বড় হয়ে ওঠার স্বাদ, ষোল বছর বয়েস থেকে যুক্ত হয়েছেন অভিনয়ে। ১৯২০ সাল থেকে শুরু ছোটোগল্প লেখা, অল্প দিনের মধ্যে কলম পরল খ্যাতি আর সাফল্যের মুকুট।

দশ বছরের মধ্যেই ১৯৩০ সালে প্রকাশিত Gigli, eine von uns (Gilgi, One of Us) আর তার পরের বছরই তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস, Das kunstseidene Mädchen(Artificial Silk Girl), আন্তর্জাতিক স্তরে সাড়া পায়।

Artificial Silk Girl প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ওঠে। ওয়াইমার রিপাবলিক যে নতুন আদর্শের জোয়ার এনেছিল, তার মধ্যেও কিন্তু ছিল প্রচুর অসংগতি আর ঘাটতি। ‘Golden Twenties’ আসলে “All that glitters are not gold” প্রবাদটাকেই আর একবার সত্যি বলে জানাল! প্রবল পুরুষতান্ত্রিক প্রভাবে নারীর মূল্যায়ন বা স্বাধীনতা একেবারে তলানিতে। সেই সময়ের মেয়েদের দুর্বিষহ জীবনের লড়াইয়ের কথা উঠে এল কিউনের উপন্যাস, Artificial Silk Girl এ।  

তরুণী বিংশ শতাব্দী চমকে উঠেছিল নায়িকা ডরিসের কথা জেনে। উপন্যাসের নায়িকা ডরিস, যে স্বপ্ন দেখে একজন ক্যাবারে স্টার হবার। কিন্তু তার দক্ষতা সীমিত। বেড়ে উঠেছে হত দরিদ্র সংসারে, জিভে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া প্রান্তিক উচ্চারণ! স্বপ্ন পূরণ করার জন্য তাই তাকে চুরি থেকে শুরু করে পতিতাবৃত্তি কীই না করতে হয়! গোটা উপন্যাস লেখা হয় ডায়েরির আঙ্গিকে, ডরিসের নিজের জবানিতে তার দিনপঞ্জী জানতে পারে পাঠক। মধ্যবিত্ত শিক্ষিত কোনো মহিলা যে এইভাবে প্রান্তিক মানুষদের কথা লিখতে পারেন এ সে যুগের জার্মানিতে তা ছিল একেবারেই অকল্পনীয়! লিঙ্গ বৈষম্যের নোংরা রাজনীতি, শ্রেণি বিভাজন, শ্রমজীবি মানুষের লড়াই – কী না উঠে এসেছে কিউনের কলমে! ডরিসের খোলামেলা জীবন, মুখের তীক্ষ্ণ অশালীন ভাষা, বহু পুরুষের সঙ্গে রাত কাটানোর পাশাপাশি কিউন এঁকেছেন তার অতি সামান্য একটু চাহিদার কথা, সে চায় একটা স্থিতিশীল চাকরি আর একজন পুরুষ যার সঙ্গে সে সংসার করতে পারবে! কিন্তু কিছুই পায় না ডরিস! উপন্যাসের শেষে সে রিক্ত, নেশাগ্রস্ত, একা!

 প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই পঞ্চাশ হাজার কপি শেষ!

কিন্তু ঈশান কোণে ঘনিয়ে এসেছিল মেঘ! সেই বছরই নাৎসি বাহিনী নিয়ে ক্ষমতায় আসীন হিটলার!

সাহিত্য শিল্পে সব জায়গাতেই পড়ল খাঁড়ার কোপ! প্রাচীন আদর্শ, আর্য চিন্তাধারার জয়গান, যুদ্ধের জয়গাথা যে ছবি বা লেখায় থাকবে না তাই হবে প্রবল ভাবে বর্জনীয়। সোজা কথায় বলতে গেলে যা নাৎসি বাহিনীর পছন্দ হবে না তাই বাতিল হবে। 

কিউনের বই তাই সমালোচিত হল তীব্রভাবে। এক সমালোচক লিখলেন কিউন তাঁর উপন্যাসে জার্মান নারীদের কলঙ্কিত করেছেন।  “…vulgar aspersions against German womanhood!”

আসলে আদর্শ নারী হবে পতির ছায়া, এই ছিল নাৎসি চিন্তাধারা। তাই স্বাধীনচেতা আত্মনির্ভরশীল নারী তাদের কাছে চরমভাবে পরিত্যাজ্য। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মার্কিন সমালোচক আর অনুবাদক হফম্যানের উক্তি, “Anything like an autonomous woman was anathema to the Nazis” তেই বিষয়টা একেবারে পরিষ্কার। 

তাই কিউনের উপন্যাস আর কিউন দুইই নাৎসিদের কাছে বিষবৎ, কিউনকে তারা ব্ল্যাকলিস্টেড করল, বাজেয়াপ্ত হল সব কাজ। নষ্ট করে দেওয়া হল  Artificial Sik girl এর সব কপি। শুধুমাত্র একটি ইংরাজি অনুবাদের কপি রক্ষা পায়।

কিন্তু কিউনের মেরুদন্ড ছিল টানটান। নাৎসিদের সম্পর্কে কিউনের মনোভাব  জানাতে গিয়ে হফম্যান লিখেছেন,

 “To her, they were idiots dressing up in uniforms and shouting and goose -stepping about the place.”

তাই কিউন এই অবিচারের বিরুদ্ধে গেস্টাপোদের বিরুদ্ধে মামলা আনলেন।

কিন্তু  হিটলারের জার্মানিতে তখন ‘বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে,’ তাই কিউনের সব চেষ্টাই জলে এল। অন্যদিকে গোঁড়া নাৎসি সমর্থক কিউনের স্বামী বিবাহের বন্ধন ছিন্ন করে দিলেন।

প্রাণ আর মান দুইই বাঁচাতে জাল পাসপোর্ট বানিয়ে কিউন জার্মানি ছাড়লেন। একের পর এক জায়গা পরিবর্তন, একবার ফ্রান্স, একবার নেদারল্যান্ডস! যোগাযোগ করছেন জার্মানি ছাড়তে বাধ্য হওয়া টমাস মান, স্টেফান জুইগ, জোসেফ রথের মত লেখক আর শিল্পীদের সঙ্গে।

বেশির ভাগ প্রতিবাদী জার্মান লেখকই তখন ঐতিহাসিক সাহিত্যের মাধ্যমে নির্মিত চরিত্রগুলিকে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু কেউনের কলম সে ধারার ধার ধারল না। নির্বাসিত কিউন লিখে চললেন সমসাময়িক জার্মান মানুষের সুখ দুঃখের কথা। বাস্তবের নির্মম যন্ত্রণা আর নোংরা রাজনীতির কথা ছত্রে ছত্রে ফুটিয়ে তুললেন তাঁর উপন্যাস After Midnight এ…যে উপন্যাসের নায়িকা ভালোবাসে তার খুড়তুতো ভাইকে, আর কাকা মেয়ের সম্পর্ক নষ্ট করতে দ্বারস্থ হয় পুলিশের। জানায় যে ছেলেটি নাৎসি নেতা হারম্যান গোরিংকে অপমান করেছে। Sunday Telegraph এর সাংবাদিক এই উপন্যাসটির আলোচনায় বলেন, “I cannot think of anything else that conjures up so powerfully the atmosphere of a nation turned insane,” The Manchester Evening News লেখে “”You can feel the creeping evil slowly infiltrate everyday existence.”

নিরাপত্তাহীন পালিয়ে বেড়ানোর দিনগুলোতেও কলম চলে কিউনের। লেখা হল আর একটি যুগান্তকারী উপন্যাস Child of all Nations, নির্বাসনে থাকা এক শিশুর গল্প। কিন্তু একে একে নাৎসি পতাকা উড়ছে নেদারল্যান্ডসে, ফ্রান্সে। তাই নাৎসি নিষেধাজ্ঞার কোপে পড়ে শতকরা পাঁচ ভাগ পাঠকের কাছেও পৌঁছতে পারে না বই। পরবর্তীকালে মায়ের সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে মেয়ে মার্টিনা বলেছেন নাৎসিরাই মায়ের মত একজন প্রতিভাবান লেখিকার জীবন ধ্বংস করে দিল!

১৯৩৯ সালে জার্মানি ছাড়তে বাধ্য হলেন প্রায় ২৫০০ লেখক।

এই সময়ই কিউন নিজের আত্মহত্যার কথা রটিয়ে দেন। সময়টা ১৯৪০ সাল। লোকে জানে ফ্রান্সের পতনের ফলেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এক ব্রিটিশ সংবাদপত্রে এ খবর যখন ছাপা হয় কিউন নিজে তখন সশরীরে নেদারল্যান্ডসে। তারপর মিথ্যা পরিচয়পত্র যোগাড় করে ফিরে আসেন একেবারে বাঘের গুহায়, খোদ জার্মানিতে, নিজের জন্মস্থান কোলনে। দেখা করেন বাবা মায়ের সঙ্গে। ছদ্ম নাম, ছদ্মপরিচয়ে। 

তবে এই সময়টা সম্পর্কে কিন্তু সমালোচকরাও ধোঁয়াশায়। 

কীভাবে কিউন সংবাদমাধ্যমে যোগাযোগ করেন, কীভাবেই বা নেদারল্যান্ডস আর জার্মানির সীমানা অতিক্রম করেন এ খবর একেবারেই অজানা। কিয়ন নিজে কখনো স্পষ্টভাবে সেসব জানাননি। কীভাবে যে জাল পরিচয়পত্র বানিয়েছিলেন সেই সাংঘাতিক সময়ে, খোদ কোনো নাৎসি অফিসারকে দিয়েই কাজ করিয়েছিলেন কিনা, এ নিয়ে হাজার আলোচনা হলেও কোনোটাই সুস্পষ্ট নয়। যে করেই হোক, কাজটা যে কিউনের প্রচন্ড দুসাহসিকতা আর বুদ্ধিমত্তার ফল, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।  জার্মানিতে হিটলারের নাকের ডগায় কিউন  ঘুরে বেড়িয়েছেন কখনো শার্লট ট্রলো নামে কখনো নম দে প্লুম নামে।

কিউনের এই জার্মানিতে ফিরে আসা, তার সম্পূর্ণ প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায় তাঁর Ferdinand, the Man with the Kind Heart, উপন্যাসে।  উনিশশো পঞ্চাশ সালে লকাহিনিতে ফার্দিন্যান্দ যুদ্ধবন্দী শিবির থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত এক সৈনিক। কিউন এই সৈনিকের জবানিতে সুতীক্ষ্ণভাবে ফুটিয়েছেন তদানীন্তন জার্মানির অবস্থা। ফার্দিন্যান্দ জানান তিনি হিটলারের পক্ষে বা বিরোধী পক্ষে  কোনোটাতেই  ছিলেন না, তাও তাঁকে যুদ্ধ করতে হয়েছিল। তিনি প্রত্যাবর্তনকারী (returenee) শব্দটাকে সহ্য করতে পারছেন না, তিনি বাঁচতে চাইছেন একজন সাধারণ মানুষ হয়ে। কিউনের কলম সোচ্চারে প্রশ্ন করছে ফার্দিন্যান্দের কণ্ঠে, সারা জার্মানি জুড়ে এখন বাড়ি গৃহহীনদের, পতিতাদের, আসামিদের জন্যে, অনাথ শিশুদের জন্যে, সাধারণ নাগরিকদের ঘর কোথায়?   

“He’s charming, woozy, passive,” হফম্যান আলোচনা করেছেন ফার্দিন্যান্দ চরিত্রটি নিয়ে, “He’s like a speck of saffron swept up by a magnet, along with all the iron filings.”

২০২০ সালের ডিসেম্বরে ইংরাজিতে প্রথমবার অনূদিত ও প্রকাশিত হয় কিউনের লেখা এই শেষ উপন্যাস।  

১৯৭০ সাল পর্যন্ত কিউনের লেখাগুলো ঢাকাই পড়ে ছিল। তারপর জার্মান ভাষায় আবার প্রকাশ হলেও সেগুলো তেমন প্রচারের আলোয় আসেনি। ২০০০ সাল থেকে মূলত হফম্যানের প্রচেষ্টায় বেশ কিছু ইংরাজি অনুবাদ প্রকাশ হতে শুরু করে। কিছু অনুবাদ তার মধ্যে কিউনের সহকর্মী অ্যান্থিয়া বেলের। 

ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সাড়া পড়ে যায় পাঠক আর সমালোচকমহলে। তাঁর Artificial Silk Girl বইয়ের বিজ্ঞাপনের ক্যাচ লাইনে লেখা হয়, Before Sex and the City there was Bridget Jones. And before Bridget Jones was The Artificial Silk Girl.” এ প্রসঙ্গে জানাই, Bridget Jones হল ব্রিটিশ লেখিকা হেলেন ফিল্ডিং এর লেখা একটি কাল্পনিক চরিত্র, এক স্বাধীন নারীর ব্যতিক্রমী জীবন সংগ্রামের গল্প। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত । Before sex and the City, একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন শো, Candace Bushnell র লেখা The Carrie Diaries  বইটি অবলম্বনে, যেখানে হাইস্কুলের মেয়ে ক্যারি সোচ্চারে জানায় তার  অভিব্যক্তি, যাতে যৌনতা, সমাজের ব্যাভিচার সব উঠে আসে। এসবের অনেক আগে প্রায় ৭৫ বছর আগে কিউন তাঁর ডরিস চরিত্রের মাধ্যমে এই সব যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেছিলেন।

হইহই পড়ে যায় বইটি নিয়ে, কিন্তু তার বহু আগেই  ১৯৮২ সালে কিউন পাড়ি দিয়েছেন চিরশান্তির জগতে। 

আমেরিকায় এখন কিউনের উপন্যাসগুলি ব্যাপকভাবে সমাদৃত। ১৯৩৭ সালে লেখা তাঁর After Midnight পড়ে প্রায় একশো বছর পরেও সমালোচকরা কিউনের প্রতিভা আর অভিজ্ঞতার মেলবন্ধন দেখে আশ্চর্য হয়ে যান। শেষ করি আমেরিকার ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও র “Books We Like” র সমালোচকের মন্তব্য দিয়ে!

Explosive…. Even, reading After Midnight today feels dangerous. I kept turning to the copyright page, unable to believe that such a sexually and politically frank book could have been published in 1937…Keun has an amazing gift for exposing the conflict at the heart of the average citizen, whose naivete is eventually and sometimes violently stripped away!

ভাগ্যিস কিউনকে নাৎসিবাহিনী ধরতে পারেনি!

তথ্যসূত্রঃ “Irmgard Keun.” Contemporary Authors Online, Gale, 2010. Literature Resource Center.

Smithsonian Magazine.

https://themillions.com/2011/07/the-second-life-of-irmgard-keun.html.

https://youtu.be/tDLglhQosLk ইর্মগার্ড কন্যা মার্টিনার ইন্টারভিউ।

Write a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loading...