জাদুটোনা
সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
১
আজকাল অল্পবয়সী মেয়েরা চুলে নানা রকম রং করে। আড়চোখে দেখে শুভর মনে হল ফুডকোর্টে পাশের টেবিলে বসা মেয়েটার চুলের রং সবুজ। পাগল না হলে চুলে কেউ সবুজ রং করে নাকি? সত্যি-সত্যি সবুজ, নাকি কোত্থেকে এক ঝাঁক টিয়াপাখি মেয়েটার মাথায় উড়ে এসে বসেছে, কে জানে? মেয়েটার দিকে সোজাসুজি তাকালে পিউ পছন্দ নাও করতে পারে। হাজার হোক এখনও শুভ আর পিউয়ের গা থেকে নতুন বিয়ের মোহন-গন্ধ যায়নি। চোখে চোখ রেখে বসে থাকার সময় দু’জনের। শুভ দেখল টেবিলের উলটোদিকে বসে মাথা নিচু করে পিউ পাস্তার প্লেটে কাঁটাচামচ চালাচ্ছে। পাস্তা মুখে তুলছে না, কী যেন ভাবছে। অন্তত শুভর দিকে তাকিয়ে নেই। শুভর কৌতুহল হচ্ছিল। আর একবার চান্স নিল। চোখের কোণা দিয়ে নিরীক্ষণ করে দেখল, নাঃ, ভুল ভাবছিল। মেয়েটার মাথার পিছনে আইসক্রিম পার্লারের নীল-সবুজ নিওন-সাইন জ্বলছে নিভছে, তাই মনে হচ্ছে চুলের মধ্যে টিয়াপাখি। আসলে তার চুলের রং হালকা-গাঢ় সোনালি। টেবিলে মেয়েটার সঙ্গে দুটো ছেলে বসে আছে, কলেজ কেটে আড্ডা দিতে এসেছে সম্ভবত। কী একটা কথায় মেয়েটা খিলখিল করে হেসে উঠল।
“ও মেয়ে, তুই যাসনে যেন সিঁড়িতে/ অন্ধকারে, কপাল পোড়ে পিরিতে,” শুভকে চমকে দিয়ে পিউ হঠাৎ ছড়া কেটে বলল। মাঝেমাঝে পিউয়ের কথাবার্তা শুভর মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়, ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “বিড়বিড় করে কী বলছ?”
পিউ যেন সংবিৎ ফিরে পেল, ঘাড় নেড়ে বলল, “কই, কিছু বলিনি তো!”
শুভ বলল, “তুমি তো কিছুই খাচ্ছ না, খালি প্লেটের ওপর চামচ নাড়াচ্ছ… ভাল লাগছে না বুঝি? অন্য কিছু নিয়ে আসব?”
পিউ বলল, “আমার জন্য একটা ফ্রুট-জ্যুস এনে দেবে প্লিজ়।”
শুভ জিজ্ঞেস করল, “কী আনব? ম্যাঙ্গো, পাইনাপেল…”
পিউ বলল, “ওয়াটার মেলন…”
ফ্রুট-জ্যুসের কাউন্টারটা ফুডকোর্টের একদম শেষ মাথায়। ট্রের ওপর কানায়-কানায় ভর্তি টকটকে লাল জ্যুসের গ্লাস ব্যালান্স করতে করতে ফিরে আসার সময় শুভ দেখল সোনালি চুলের মেয়েটা টেবিলে নেই। শুধু ছেলে দুটো বসে গুলতানি করছে। জ্যুস পেয়ে পিউ খুশি হল। তরল লোহিত লাবণ্যের ওপর কয়েক টুকরো তরমুজ ভাসছে। পাস্তার প্লেটটা পাশে সরিয়ে রাখল। কাঁটাচামচ দিয়ে গেঁথে তরমুজগুলো খেয়ে, জ্যুসটা চোঁ-চোঁ করে মেরে দিল। বলল, “চলো উঠি, এখনও অনেক কিছু কেনাকাটা বাকি রয়ে গেছে।”
লকডাউন শিথিল হবার পর মলের দোকানপাট খুলছে আস্তে আস্তে, যদিও লোকজন কম। বিধিনিষেধ মেনে ওদের বিয়েতেও অতিথি-অভ্যাগত খুব বেশি হয়নি। বিয়েটা যে হবে সেটা ঠিক ছিল অনেকদিন ধরেই। লকডাউনের চক্করে আয়োজন করা যাচ্ছিল না। শেষে দু’-বাড়ি থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, আর নয়, ভারচ্যুয়াল প্রেম অনেক হয়েছে, এবার নমো-নমো করে চার হাত এক করে দেওয়া যাক। হতচ্ছাড়া ভাইরাস কব্জায় এলে, পরে না-হয় বড় করে অনুষ্ঠান করা যাবে। যথারীতি পুরুত, নাপিত, ম্যারেজ রেজিস্টার ডেকে বিয়েটা হয়ে গেল বটে কিন্তু কারোরই তেমন মন ভরল না। পিউ অবশ্য বিশেষ অভিযোগ করেনি। শুভ একটু আশ্চর্য হয়েছিল। বিয়ে-থা নিয়ে মেয়েদের অনেক স্বপ্ন থাকে। নিরালায় জিজ্ঞেস করেছিল, এমন সাদামাটা, দায়সারা গোছের বিয়ে, পিউয়ের মনখারাপ হয়নি তো। পিউ ঘাড় নেড়ে বলেছিল, না, ও নাকি আগে থেকেই জানত ওদের বিয়েটা ঘটা করে হবে না।
পিউয়ের এই ‘আগে থেকে জানার’ ব্যাপারটা নিয়ে শুভ ইদানীং বেশ অস্বস্তিতে থাকে। পিউদের জয়েন্ট ফ্যামিলি, উত্তর কলকাতায় হাতে গোনা যে দু’-চারটে বনেদি বংশ টিকে আছে তাদের একটা। পারিবারিক সোনারূপোর ব্যবসা, শেয়ালদায় বড় শো-রুম। পরিবারে গোঁড়ামি না থাকলেও ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশার সুযোগ ছিল না। বিয়েটা স্থির হয়েছিল ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইট ঘেঁটে, দেখাশুনো করে। তারপর ওরা দু’-বাড়ির বড়দের সম্মতি নিয়ে নিজেরা যোগাযোগ করে, কথাবার্তা বলে। বেশিরভাগটাই ফোনে, কারণ শুভ ব্যাঙ্গালোরে চাকরি করে, কেবলমাত্র ছুটিছাটাতেই কলকাতায়… লকডাউনের ঠেলায় তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শুভ মুখচোরা, পিউই আগ বাড়িয়ে কথা শুরু করেছিল, মাঝরাতে লুকিয়ে-চুরিয়ে ভিডিও কল। তখনই বলেছিল, শুভর সঙ্গে যে বিয়ে হবে, সেটাও নাকি পিউ আগে থেকে জানত। আমেরিকা-প্রবাসী একটি ছেলের সঙ্গে সম্বন্ধ এসেছিল, ভাল চাকরি-বাকরি করে, দেখতেও সুশ্রী। ছেলেটির বাবা-মা পিউদের বাড়ি এসে আলাপ করে গিয়েছিলেন। পিউকে খুব পছন্দ হয়েছিল ওঁদের। পিউ ছেলেটিকে পত্রপাঠ নাকচ করে দেয়। শুভ কারণ জিজ্ঞেস করাতে পিউ বলেছিল, তাহলে তোমার সঙ্গে বিয়ে হবে কী করে? একসঙ্গে কি দু’জনকে বিয়ে করা যায়? শুভ আর ঘাঁটায়নি।
“কেমন লাগছে গো?” পিউ ট্রায়ালরুমে ঢুকেছিল। ব্যাঙ্গালোরে কি আর কলকাতার মত জামাকাপড়ের চয়েস পাওয়া যায়? তাই পিউ এখান থেকেই যা নেওয়ার নিয়ে নিচ্ছে। মেয়েদের পোশাকের এই শো-রুমটা ফুড-কোর্টের ফ্লোরেই। পাস্তা ফেলে, তরমুজের জ্যুস শেষ করে পিউ টুক করে ঢুকে পড়েছিল। শুভ দু’-একবার বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, ব্র্যান্ডেড জিনিস দেশের সব শহরেই এক। পিউ পাত্তা দেয়নি। ওরা সামনের সপ্তাহে ব্যাঙ্গালোর চলে যাবে। কবে আবার ফেরা হবে কে জানে? শুভ বলল, “বেশ!”
পিউ ট্রায়াল রুমের দরজায় দাঁড়িয়েই ভেতরের আয়নায় ঘুরেফিরে নিজেকে দেখে বলল, “নাঃ…”
এই নিয়ে তিনবার হল। শুভ হাতে বাতিল পোশাকের স্তূপ নিয়ে ঠায় পায় দাঁড়িয়ে আছে। পিউ ট্রায়াল রুমে একবার করে ঢুকছে আর বেরিয়ে এসে বলছে, ‘নাঃ’। শুভ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছিল, সোনালি চুলের মেয়েটার ব্যাপারে তখন কী যেন বলল পিউ? ‘সিঁড়িতে যাসনে’ না কী যেন… মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করেই বলেছিল কি? নাকি এমনিই, নিজের মনে? ও কি নজর করেছিল শুভ মেয়েটাকে ঝাড়ি করছে? শুভ নিজেকেই শাসন করল, ঝাড়ি কোথায়? মেয়েটার চুলের মধ্যে টিয়াপাখি কিনা নিশ্চিত হবার জন্য একটু টেরিয়ে টেরিয়ে দেখেছে। তাতে তেমন দোষ নেই।
শো-রুমের একটা কোণে সুড়ঙ্গের মত একটা করিডোর, ভেতরে চারটে ট্রায়াল রুম। তার মধ্যে একটারই দরজা বন্ধ, পিউ ঢুকেছে। অন্যগুলোর দরজা হাট করে খোলা। শো-রুমে ভিড় নেই। মেয়েদের ট্রায়াল রুমের করিডোরের মুখে ইউনিফর্ম পরে এক মহিলা সিকিউরিটি দাঁড়িয়েছিল। শুভর মুখ দেখে তার বোধহয় দয়া হল। বলল, ওগুলো আমার হাতে দিন, আমি রেখে আসছি। শুভ পিউর অপছন্দের পোশাকগুলো তার হাতে চালান করে দিল। সে সরে যেতেই পিউ ট্রায়াল রুমের দরজা খুলে মুখ বাড়িয়ে ডাকল, “এদিকে এসে একবার দেখো তো।”
শুভ ‘যাই’ বলে এগোতেই পিউ তার টিশার্টের বুকের কাছটা খিমচে দরজার আড়ালে টেনে নিয়ে গিয়ে ঠোঁটে চুমু দিল। শুভ হকচকিয়ে গেল। কখন যে কী করে! মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা যায় না। গলার কাছে নীল সুতোর কাজ করা একটা পিঙ্ক কুর্তি পরে আছে পিউ, বুকের বোতামগুলো খোলা, দুষ্টু হেসে বলল, “বললে না, কেমন লাগছে!”
পিউকে রানির মত লাগছিল। হাতের উলটো পিঠ দিয়ে ঠোঁট থেকে লিপস্টিকের রঙ মুছে নিয়ে শুভ বলল, “বাঃ, দিব্যি মানিয়েছে।”
পোশাকটা পিউয়েরও সম্ভবত মনে ধরেছিল। হাতের ঠেলা দিয়ে শুভকে ট্রায়াল রুমের বাইরে বার করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। মিনিট পাঁচেক পরে দাম মিটিয়ে শো-রুম থেকে বেরোতে বেরোতে শুভ ভাবল, চল্লিশ মিনিটের অপেক্ষা আর পরিশ্রমের ফসল একটা ভিজে চুমু আর একখানা পিঙ্ক কুর্তি। এই মেয়ের সঙ্গে বাকি জীবনটা কোথা দিয়ে যে কেটে যাবে টের পাবে না। দোকানপাট দেখতে দেখতে পিউ শুভর হাত ধরে অলস ভাবে হাঁটছিল। ফুডকোর্টের ওপরের তলায় আলো-আঁধারি, মুভি থিয়েটার – মাল্টিপ্লেক্স। এস্কালেটরের সিঁড়িটা চলছিল না। দু’-চারজন যারা সাহস করে সিনেমা দেখতে আসছে তারা সিঁড়ি ভেঙেই উঠছিল। হঠাৎ একটা সোরগোল শোনা গেল। লোকজন এস্কালেটরের দিকে ছুটে গেল। ওরা দু’জন কাছে গিয়ে দেখল ভিড়ের মধ্যে সেই সোনালি চুলের মেয়েটা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। সে নাকি পা মুচকে আট-দশটা সিঁড়ির ওপর থেকে গড়িয়ে পড়ে গেছে। শুভ দেখল তার একপাটি জুতো হিল ভেঙে সিঁড়ির কোণায় মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে।
শুভ পিউয়ের দিকে তাকাল। মেয়েটা যে পড়ে গেছে সে নিয়ে পিউয়ের আদৌ কোনও হেলদোল নেই। অন্যদিকে তাকিয়ে পিউ গুনগুন করে কী একটা গানের সুর ভাঁজছে, সুরটা চেনা-চেনা, কিন্তু কথা মনে পড়ল না। আচমকা শুভর হাতে টান দিয়ে পিউ বলল, “চলো, চলো…”
২
পিউ বলল, “ফেরাটা সপ্তাহ খানেক পিছিয়ে দাও।”
শুভ আঁতকে উঠল। মেয়েটা বলে কী? নতুন চাকরি, বসের হাতে পায়ে ধরে তিন সপ্তাহের ছুটি নিয়ে বিয়ে করতে এসেছে। বলল, “খেপেছ? চাকরি নট হয়ে যাবে।”
পিউ মুখের একটা রেখাও না বাঁকিয়ে বলল, “সতেরো তারিখ যাওয়া হবে না। এবার তুমি যা ভাল বোঝো করো।”
পিউ পারতপক্ষে তর্কাতর্কি, আলাপ-আলোচনার মধ্যে যায় না। নিজের কথাটা দ্বর্থ্যহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়ে চুপ করে যায়। শুভ এই ক’দিনের মধ্যেই বুঝে গেছে, দাবাং-এর হিরোর মত একবার ‘কমিটমেন্ট’ করে বসলে পিউ ‘খুদকি ভি নেহি শুনতা’। ভাবনারও একটা নির্দিষ্ট কালক্রম থাকে। কার্য-কারণ সম্পর্ক থাকে। ফলত কুসুম-কোমল নতুন বৌকে পেশীবহুল সুপারস্টারের সঙ্গে তুলনা করে, যদিও মনে মনে, শুভর একটু পাপবোধ হল। নাঃ, একটু বেশিই ভাবছে সম্ভবত। তাছাড়া প্রয়োগটাও বোধহয় ভুল হল, ‘শুনতা নাকি ‘শুনতি’? অবশ্য হিন্দি ভাষায় কোন বস্তুর লেজে কী জেন্ডার লাগবে তার কোনও মাথামুণ্ডু নেই। তবু পিউ শব্দটা যে স্ত্রী-লিঙ্গ সে ব্যাপারে শুভর অন্তত কোনও সন্দেহ থাকা উচিত নয়।
ব্যাঙ্গালোর কসমোপলিটান সিটি, হিন্দি জানলে রাস্তাঘাট, সুপারমার্কেটে কাজ চলে যায়। শুভ সবে হিন্দিতে সড়োগড়ো হতে শুরু করেছে। কন্নড়ে দু’-একটা শব্দ শিখছে। যাই হোক, জেন্ডার-মেন্ডার নিয়ে আপাতত মাথা না খুঁড়লেও চলবে। বসের থেকে ছুটি ম্যানেজ করাটাই এখন আসল চ্যালেঞ্জ। জ্বর-পেটখারাপের অজুহাত দেওয়া যাবে না। তাহলে বস আরটি-পিসিআরের রিপোর্ট দেখতে চাইবে। বৌয়ের সঙ্গে শপিং করতে করতে হাঁটুর মালাইচাকী ঘুরে গেছে বলা যায়। কিন্তু ভিডিও কলে হেঁটে দেখাতে বললে তখন ফেঁসে যাবে। শুভ খোলা জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আকাশপাতাল ভাবছিল। পিউ বলল, “চিন্তা কোরো না। তুমি এক সপ্তাহ পরের একটা টিকিট কেটে রাখো। সতেরো তারিখের ফ্লাইটটা এমনিতেই ক্যানসেল হয়ে যাবে, তুমি ফুল রিফান্ড পেয়ে যাবে।”
হলও তাই। বলা কওয়া নেই, ষোলো তারিখ বিকেলে বঙ্গোপসাগরের ওপর আচমকা একটা নিম্নচাপ ঘনিয়ে উঠল। তীব্র ঝড় তুমুল বৃষ্টির হাত ধরে সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়ল। দক্ষিণবঙ্গে টানা তিনদিন অঝোর বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল। ভরা কোটালে নদীর লকগেট বন্ধ থাকায় কলকাতার রাজপথে নৌকো নামল। এয়ারপোর্টের টারম্যাক ভেসে যাওয়ায় সতেরো তারিখ শুভদের ফ্লাইট ক্যানসেল হয়ে গেল। বসকে জানাতে তিনি একটু অসন্তুষ্ট হলেন, কিন্তু মেনে নিলেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, না মেনে উপায়? কলকাতা-ব্যাঙ্গালোর ফ্লাইটের দাম চড়চড় করে বেড়ে গেল। শুভ ভাগ্যিস পিউয়ের কথা শুনে আগে থেকে একটা টিকিট কেটে রেখেছিল!
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল বটে কিন্তু শুভর মাথায় অন্য চিন্তা ঢুকল। পিউয়ের কি দৈব শক্তি আছে? কী করে জানল সতেরো তারিখের ফ্লাইট ক্যানসেল হয়ে যাবে? সে কি সত্যি-সত্যি ভবিষ্যৎ দেখতে পায়? নাকি সে জাদুটোনা জানে? এমন তো নয়, শুভ একজন ডাইনিকে বিয়ে করেছে? শুভ ঘুমিয়ে পড়লে সে হাতকাটা কালো নাইটি পরে, ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চোখের নিচে গাঢ় করে কাজল এঁকে নেয়। তারপর শুভর পাশে হাঁটু গেড়ে বসে, ঝুঁকে পড়ে, তার দুই ভুরুর মাঝখানে অনামিকা ছুঁইয়ে বিড়বিড় করে বশীকরণের মন্ত্র উচ্চারণ করে। সেসময় জানলা দিয়ে দুটো চামচিকে উড়ে এসে তার কানের লতি কামড়ে মাকড়ির মত ঝুলে থাকে। আর তার স্তনসন্ধির সামনে গ্র্যান্ডফাদার ক্লকের পেন্ডুলামের মত সিম্পল হারমোনিক মোশানে দুলতে থাকে গলার চেন-এ ঝোলানো নীলকান্তমণির লকেট, টিক-টক… টিক-টক…
ছবিটা কল্পনা করেই শুভর শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত নামল। মন্ত্রের প্রভাবে শুভ কি ধীরে ধীরে ঘন কুঞ্চিত রোমাস্তীর্ণ ভেড়ায় পরিণত হবে? শুভ চোখের সামনে হাত এনে পরীক্ষা করে দেখল, রোমের ঘনত্ব বা দৈর্ঘ্যে কোনও পরিবর্তন এসেছে কি না। নাঃ, অন্যরকম কিছু বোঝা যাচ্ছে না, কেবল আশঙ্কাজনিত কারণে রোমগুলো খাড়া হয়ে আছে। রগের দু’দিকে আঙুল ঘষল, শিং-জাতীয় অস্বাভাবিক কিছু ঠেলে উঠছে না তো? পিউ ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে নখের থেকে তুলো দিয়ে ঘষে ঘষে নেলপালিশ তুলছিল। জিজ্ঞেস করল, “মাথা ধরেছে? টিপে দেব?”
শুভ তার লম্বা-লম্বা নখের দিকে সভয়ে তাকিয়ে বলল, “না, না…”
বেডরুমের জানলার বাইরে রাত বাড়ছে। ওরা আপাতত শুভদের অ্যাপার্টমেন্টে রয়েছে। পিউ নখের কোণে রঙ লেগে আছে কি না দেখার জন্য তার চম্পক-অঙ্গুলি চোখের সামনে এনে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে বলল, “তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি।”
পিউয়ের নখ কি আসলে নখ-দর্পণ? ওখানেই পিউ অনাগত সময়ের প্রতিফলন দেখতে পায়? হা ঈশ্বর! পিউ কি এবার স্বীকার করবে সে এই গ্রহের প্রাণী নয়! মানুষের রূপধারী কোনও মহাজাগতিক অস্তিত্ব! অনৈসর্গিক শক্তি-স্বরূপিনী! পিউ অবশ্য সেদিক মাড়াল না। গলা নামিয়ে বলল, “জানো, এবার না আমার… হয়নি।”
শুভ হাঁদার মত জিজ্ঞেস করল, “কী হয়নি?”
পিউয়ের গালে রক্ত জমল। বলল, “বুদ্ধুরাম, কিছু বোঝো না যেন!”
শুভ ঘাবড়ে গিয়ে বলল, “অ্যাঁ, সে কী? তবে যে বলেছিলে সেফ পিরিয়ড, অসুবিধে নেই।”
পিউ বলল, “কী করব? তুমি এমন আদেখলেপনা করলে হিসেবে গোলমাল হয়ে গেল।”
শুভ মুখ গোঁজ করে বলল, “ও এখন দোষ আমার হল?”
পিউ মুচকি হেসে বলল, “দোষের আবার কী? কিছু হলে হবে।”
‘কিছু হলে হবে’ মানে? কী সাংঘাতিক! ফীডিং বটল, বেবিফুড, লাল-নীল অয়েলক্লথ, ন্যাপি বদলাতে গিয়ে নাকানি-চোবানি… এই মিলন-কূজন, এই মধু-যামিনী এমন ফুস করে ফুরিয়ে যাবে! পিউ, ইউ বিশ্বাসঘাতিনী! শুভ আহত গলায় বলল, “তাই বলে এত তাড়াতাড়ি?”
পিউ ভেংচি কেটে বলল, “দস্যিপনা করার সময় মনে ছিল না?”
শুভ হাল ছেড়ে দিয়ে বলল, “আচ্ছা, আচ্ছা, কবে ডেট ছিল?”
পিউ চোখ নামিয়ে বলল, “সাত দিন আগে,” তারপর শুভর কাছে এসে পিছন থেকে গলা জড়িয়ে আদুরে গলায় বলল, “আমাদের একটা ফুটফুটে মেয়ে হবে, জানো!”
ব্যাস, হয়ে গেল। পিউ যখন একবার মুখ থেকে কথা বার করেছে সে কথার আর নড়চড় হবে না। দশ মাস পরে শুভর ঔরসে, পিউয়ের গর্ভে একটি সুলক্ষণা কন্যা-সন্তান জন্ম নেবে সে বিষয়ে আর কোনও অনিশ্চয়তা রইল না। আগামী দিনগুলোর ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে শুভর হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছিল। মন খারাপ হলে গান শোনা শুভর পুরনো স্বভাব। কী গান শোনা যায়! বিমর্ষ মনে মোবাইলে ভজন চালিয়ে দিল শুভ, পীড়িত হৃদয় ভক্তিগীতি শ্রবণে যদি সামান্য শুশ্রূষা পায়! পিউ বলল, “আর কিছু খুঁজে পেলে না?”
শুভ স্তিমিত গলায় বলল, “এখন থেকে তো এই সব গান শুনেই রাত কাটাতে হবে। অভ্যেস করি।”
পিউ কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিল, বলল, “কাল নিউমার্কেট থেকে এক জোড়া খঞ্জনী কিনে এনো, সঙ্গতে কাজে লাগবে।”
৩
অনেকদিন পর পাশের ব্লকের মিসেস আগরওয়ালের ফ্ল্যাটে গুরুদেব পায়ের ধুলো দিয়েছেন। আজ সারারাত সেখানে নাচন-কোঁদন নাম-সংকীর্তন চলবে। আশপাশের ফ্ল্যাটের আবাসিকদের চরম অশান্তি, কানের দফা রফা। সকাল-সকাল চান-টান সেরে শুদ্ধ হয়ে শুভর মা পিউকে নিয়ে, মুখে মাস্ক লাগিয়ে মিসেস আগরওয়ালের ফ্ল্যাটে গুরুদেব দর্শনে গিয়েছিলেন। শুভ উঁকি মেরে দেখল বাবা বাথরুমে, একবার ঢুকলে মোটামুটি ঘন্টাখানেকের জন্য নিশ্চিন্ত। শুভ ডক্টর মিত্রকে ফোন করল। ভেবেছিল সন্ধের দিকে একবার পিউকে নিয়ে ঘুরে আসবে। ডক্টর মিত্র বললেন, এখনই এত উতলা হবার কিছু নেই। হুড়মুড়িয়ে ছুটে আসতে হবে না। তোমরা নিজেরাই কনফার্ম করতে পারবে। পাড়ার ফার্মেসি থেকে একটা প্রেগন্যান্সি টেস্টিং কিট কিনে এনে দেখে নাও।
শুভ বেরোল। পাড়ার দোকানে যেতে একটু লজ্জা হল। সবাই চেনে জানে। কিছু বলবে না, আড়ালে মিচকি-মিচকি হাসবে। খানিকটা হেঁটে বেপাড়ার দোকান থেকেই কিটটা কিনল। ক্যাজুয়ালি প্লাস্টিকের প্যাকেট দোলাতে দোলাতে বাড়ি ফিরে দেখল, মা আর পিউ ফিরে এসেছে। পিউ বেডরুমে পোশাক বদলাচ্ছে, মায়ের মুখ থমথমে, ঝড়ের পূর্বাভাষ। শুভ গলা নামিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করল, “কী হল?”
মা বলল, “আমি আর কী বলব? তোমার বৌকেই জিজ্ঞেস করো।”
শুভ কথা বাড়াল না। বেডরুমে ঢুকে সাইড টেবিলে প্যাকেটটা রেখে জিজ্ঞেস করল, “কী হল? এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলে?”
পিউ ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে বসে চুলে চিরুনি চালাতে চালাতে জবাব দিল, “কী আবার হবে? গুরুদেব চলে গেলেন, আমরাও ফিরে এলাম।”
শুভ বলল, “সে কী? তাঁর তো আরও দু’-দিন থাকার কথা।”
পিউ বলল, “কী জানি? প্রণাম করে সামনে বসার পর আমার গায়ে মাথায় হাত বুলোচ্ছিলেন, তা আমি বললাম, গুরুদেব, আপনি বোধহয় লোক চিনতে ভুল করছেন, আমি মিসেস কৃষ্ণা আগরওয়াল নই।”
শুভ তুতলিয়ে বলল, “অ্যাঁ… ক-কী বললে?”
পিউ বলল, “যা শুনলে…”
শুভ ধপাস করে বিছানায় বসে পড়ল, “কেউ কিছু বলল না?”
পিউ বলল, “মিসেস আগরওয়াল তো শুনেই হাউমাউ করে উঠলেন। গুরুদেবও চোখ পাকিয়ে শাসানি দিতে শুরু করেছিলেন। আমি উপস্থিত ভক্তবৃন্দদের দিকে তাকিয়ে বললাম, গতবছর ঢ্যামনাটা পায়রাডাঙায় কী কেলেংকারি করেছিল সেটা কি আপনারা জানেন?”
বিস্ময়ে শুভর কথা আটকে গেল, “পায়রাডাঙায়… কেলেংকারি… কে… গুরুদেব…”
পিউ বলল, “হ্যাঁ, বলব কী, পায়রাডাঙা শুনেই যেন জোঁকের মুখে নুন পড়ল। তোমাদের পূজ্যপাদ গুরুদেব পত্রপাঠ আসন ছেড়ে উঠে পাশের ঘরে সেঁধোলেন। মিসেস আগরওয়ালও পিছন-পিছন গেলেন। কেত্তনের দল আর কী করবে, গান-টান থামিয়ে বিড়ি খেতে নিচে গেল। তাদের একটা ছোকরা মিনিট দশেক পরে এসে বলল, সে নাকি নিজের চোখে দেখেছে গুরুদেব নামাবলীতে মুখ ঢেকে ট্যাক্সিতে উঠছেন।”
শুভ হাঁ করে পিউয়ের কথা শুনছিল। বলল, “মানে গুরুদেব চম্পট দিলেন। কিন্তু একটা কথা বল তো, তুমি পায়রাডাঙার কথা জানলে কী করে?”
“কী জানি! মনে এল তাই বললাম,” বলে পিউ অন্যমনস্ক হয়ে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। স্পষ্টতই বুঝিয়ে দিল আপাতত পিউ এর বেশি কিছু বলবে না। শুভ একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে উঠে পড়ল। কিচেন থেকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে বাসনপত্রের শব্দ আসছিল। সেগুলো যে খুব স্বাভাবিক নিরপরাধ শব্দ সে রকম মনে হচ্ছিল না। গিয়ে দেখল, মা গ্যাসে চায়ের জল চড়িয়েছে। বলল, “মা, আমার জন্যেও হাফ কাপ জল নিও।”
বাবা লিভিংরুম থেকে হেঁকে বলল, “আমার জন্যেও… পেটটা ঠিক খোলসা হল না।”
“তোমার পেট আর কোনোদিন খোলসা হবে না,” মা গজগজ করতে করতে চায়ের জল মাপছিল। এমনিতেই মেজাজ খারাপ, গুরুদেব যে এইভাবে দুশ্চরিত্র শয়তান প্রতিপন্ন হবেন কে ভেবেছিল? আর হাটে হাঁড়ি ভাঙল কে? না, নতুন বৌমা। কথা তো নয় যেন বেদবাক্য। এবার আবাসনের লোককে জবাবদিহি করতে করতে প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে। ছেলে-বৌয়ের আর কী? কাল না-হলে পরশু ফুড়ুৎ করে উড়ে যাবে। উপদ্রব সইতে হবে বাপ-মাকে। বাপ তো সদাশিব। রিটায়ারমেন্টের পর খবরের কাগজ আর টিভির নিউজ চ্যানেল ছাড়া আর কোনদিকে নজর নেই। ছেলেটাও হয়েছে কেমন একটা মেনিমুখো টাইপের। বৌয়ের কথায় ওঠে-বসে, হামাগুড়ি দেয়। এখন বৌ বোধহয় কোনও কারণে ঘর থেকে বার করে দিয়েছে। তাই মায়ের আঁচল ধরতে এসেছে।
“কোথায় বেরিয়েছিলি?” শুভ চায়ের সঙ্গে খাবে বলে বিস্কুটের কৌটো খুঁজছিল। আচমকা প্রশ্নটা শুনে কেমন ভেবলে গেল। আমতা-আমতা করে বলল, “মাথা ধরার ওষুধ কিনতে।”
“কার আবার মাথা ধরল?”
“আমার,” বলে কিচেন থেকে কেটে পড়ল। মিথ্যে কথা গুছিয়ে বলতে পারে না শুভ, বিশেষ করে মায়ের কাছে ধরা পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। বাবা লিভিংরুমে খবরের কাগজে মুখ ডুবিয়ে বসে। পায়ে পায়ে বেডরুমে ফিরে এসে দেখল, পিউ তখনও খোলা জানলার দিকে চেয়ে বসে আছে। মুখের থেকে সকালের প্রসাধন মোছার কথাও মনে নেই। হাতের চিরুনি খোলা চুলের মধ্যে ডোবানো। শুভ তার কাঁধে হাত রাখল। পিউ চমকে ঘুরে তাকাল। শুভ বৌয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলল, “তোমার জন্যে একটা জিনিস এনেছি।”
প্লাস্টিকের প্যাকেট থেকে বার করে প্রেগন্যান্সি কিটটা হাতে দিল। পিউ সেটা হাতে নিয়ে ওপরের লেখাগুলো মন দিয়ে পড়ছিল। শুভ বলল, “ডক্টর মিত্র বলেছেন তুমি নিজেই টেস্ট করতে পারবে।”
পিউ নিরুৎসুক মুখে প্যাকেটটা সরিয়ে রেখে বলল, “টেস্ট করার দরকার নেই, আমি জানি।”
সারাটা দিন মেঘলা হয়ে রইল। সঙ্গে গুমোট গরম। হাওয়া নেই, গাছের একটা পাতা নড়ছে না। নিষ্কর্মা বসে থাকলেও শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছে। বিকেলের দিকে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গরম কিছুটা কেটেছিল বটে কিন্তু অস্বস্তি বিলকুল কমেনি। মা সকাল থেকে মুখ ভার করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পিউও সেই যে মুখে তালা লাগিয়েছে একেবারে স্পিকটি নট। তাকে বার কয়েক খোঁচা দিয়েও বিশেষ কোনও লাভ হয়নি। সেও কেমন অগোছালো। রাত্তিরে খাবার টেবিলেও মেঘ কাটল না। যে যার মত খেয়ে চুপচাপ উঠে পড়ল। পিউ কিচেনে, টুকটাক কাজ সারছিল। শুভ বেডরুমে গিয়ে এসি চালিয়ে একটা পেপারব্যাক খুলে বসল।
কখন চোখ লেগে এসেছিল। পাঁজরে একটা খোঁচা খেয়ে চোখ মেলল শুভ। ঘুমচোখে দেখল পিউ ওর মুখের ওপর ঝুঁকে আছে। পিউয়ের পরনে সেই হাতকাটা কালো নাইটি। চোখে ধ্যাবড়ানো কাজল। কানে অবশ্য চামচিকে নেই। শুভ ধড়ফড় করে উঠে বসে জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে?”
পিউয়ের মুখ রক্তশূন্য। হাতে প্যাকেট ছাড়ানো প্রেগন্যান্সি কিট। শুভর চোখের সামনে দুলিয়ে হতাশ গলায় বলল, “দেখো না, নেগেটিভ…”
শুভ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, “সে কী? তবে যে বলেছিলে…”
পিউ বলল “কী জানি!”
শুভ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। জিজ্ঞেস করল, “তুমি নিশ্চিত? হান্ড্রেড পারসেন্ট…?”
পিউ বলল, “নিজেই দেখো না…”
শুভ চওড়া করে হাসল। যাক বাবা, বাঁচা গেল। তার মিষ্টি বউটা তার মানে সত্যি-সত্যি ডাইনিবুড়ি নয়। তার সব ভবিষ্যদ্বাণী ঠিকঠাক হয় না। ভুলচুক মানুষেরই ধর্ম। সে নেহাত রক্তমাংসের মানুষ। স্বভাব-দোষে আন্দাজে ঢিল ছোড়ে। দু’-একটা বাই চান্স লেগেও যায়। তার বেশি কিছু নয়।
পিউ মনঃক্ষুণ্ণ হল, বলল, “তুমি হাসছ?”
গত কয়েকদিন ব্যাপক টেনসান গেছে। দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুম হয়নি ভাল করে। আজ বেশ ফুরফুরে লাগছে। সে পিউয়ের মান ভাঙানোর জন্য পিঠে হাত দিয়ে কাছে টেনে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবোল। মেয়েটার গা দিয়ে যে কী করে সবসময় জুঁই ফুলের গন্ধ বেরোয়! যখনই কাছে আসে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। পিউ বলল, “আঃ, ছাড়ো! কী শুরু করলে?”
শুভ বারণ না শুনে পিউকে আবার কাছে টানতে যাচ্ছিল। থেমে গেল। ধ্যাত তেরি! সকালে ফার্মেসী থেকে প্রেগন্যান্সি কিট কেনার সময় নিরাপত্তার প্যাকেট কেনার কথা মাথায় আসেনি। এখন কর গুনে দিনের হিসেব করতে বসলে পিউ না জানি আবার কী ভুল করে বসবে! কে আর আলটপকা রিস্ক নেয়! তার চেয়ে বরং… সরে বসে, মোবাইলে ফুল ভল্যুমে ভজন চালাল শুভ, মাইয়া মোরি, ম্যায় নেহি মাখন খায়ো… গুরুদেব ভাগলবা হয়েছেন তো কী হয়েছে? আজ রাতে শুভর বেডরুমে অখণ্ড হরিনাম, নির্জলা হরিমটর। পাশের ঘরে শুভর মা মুখ বেঁকিয়ে বললেন, “জ্বালাতন!”
Gautam Bandyopadhyay
January 24, 2023 |চমৎকার
PALLAB CHATTERJEE
February 3, 2023 |হরের্নামৈব কেবলম। হে প্রভো, তুমিই সত্য। আর সত্য শেষ লাইনে শুভর মায়ের বিরক্তিজনিত মন্তব্য- ‘জ্বালাতন’!
Supriyo Lahiry
February 3, 2023 |বহত মজা আয়া। দারুণ। খুব সুন্দর আইডিয়া।