চারটি কবিতা
স্নেহাংশু বিকাশ দাস
পোড়া নারীদের বুকে
স্মৃতি আর রক্তপাতের মাঝখানে শামুকের ঘুম লেগে আছে
এসময় ভাঙা সিঁড়িতে অসময়ের বৃষ্টি – নরম ফেনার গান
টুকরো করছে আয়ু, সমাধিতে অদ্ভুত বোঝাপড়া
মনে হয় পরপর কয়েকটা বাঁক পেরোলেই তেলরং জীবন
মাটিতে কাদায় গড়িয়ে পড়বে বিষণ্ণ নকশি কাঁথা
সে কখনও অলস বিশ্বাস, শিথিল অভিমান
জেগে উঠলে মশালের দিকে একাকী হয় ধারালো শ্রাবণে
হয়তো বসন্তদিন ফিরে এলে ঠোঁট রাখবে পোড়া নারীদের বুকে
পশ্চিমের জঙ্গলে খুঁজে নেবে হলুদ কুয়াশা, মায়াবী পালক
পুরনো দরজাগুলো এক এক করে ফুরিয়ে যাচ্ছে
কোথায় যে নিবিড় স্পর্শ থাকে, মুগ্ধ ঢেউয়ের আনাগোনা
নয়নপথের আগুন অথবা আহত পাপ যেন
ফুরিয়ে যাওয়ার আগে রেখে যেতে পারে আনন্দ-শরীর, তার গোপন বাংকার
অভিমান
শহর গুটিয়ে নিচ্ছে শরীর এই নদী
কতদিন সূর্যাস্ত দেখিনি
খুঁড়িনি নিজের ভেতর মরা চাঁদ
শব্দরাত্রি আর অজস্র ঘুণ – ভেঙেছে গর্ভজলের বিষাদ
তিলতিল গড়ে ওঠে বিশুদ্ধ মেঘ, দুরগামী হাওয়া
অভাবি মুখের শহর চিনেছে অলিগলি, ধূলিদাগ
জড়িয়ে রেখেছে জলের তরল, নির্ভার ঘুম
সমূহসন্ধের বুকে বাসনাকুয়াশা
ক্ষতচিহ্নের চোখে দেখছে ভাঙা সেতু, অভিমানী পাতাখসা
অস্তরাগ
বেজে ওঠে সুপ্রাচীন শাঁখ। আমি
আধভাঙা সেই বাড়িটি খুঁজছি। তার
দীর্ঘ ডানায় লঘু পাপ, শূন্যের ছায়া।
আনন্দকুয়াশা ভেদ করে চলে গেছে শিকড়ের দিকে।
যে পথে পতঙ্গ ও ঘুমের সমূহ দহনভার
আজও মায়াবী জলে ও আগুনে শব্দ ভাঙে
কেউ তো চিনেছে শরীর, গূঢ় অভিমান
ভেতরে রাত্রিকাল, অপার্থিব আলোর ক্ষয়
ক্রমশ গুটিয়ে নিচ্ছে অন্তিম সিঁড়ি, ব্যাকুল অস্তরাগ।
সেইসব রক্তপাতের পরে
পুরনো ক্ষতস্থান থেকে এখনও
হৃদয়বাঁশির শিস শোনা যায়
অজস্র রোদ্দুরে আমলকি পাতা ভরে গেলে
শূন্য উঠোনে সারাদিন ঢেউ
তার বিবর্ণ বেঁচে থাকা
বারবার করাঘাত করে গোপন দরজায়
খেলা ছলে ছুঁড়ে দেয় দু-একটি সুর
নষ্টজলের বারান্দায়
কে যেন রক্তপাতের ছবি রেখে গেছে
অন্ধবাতাসের নিবিড়তায়
মৃত্যুর রং নিয়ে অনেক কাটাকুটি
ভয় হয়, সন্দেহ বাড়ে
আমার বেঁচে থাকা নিভৃতে বেজে ওঠে
ইমন কল্যানে….