করিডর
সুমিতাভ ঘোষাল

কী চাই? এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারে না সে কাউকেই। সত্যিই কি সে কিছু চায়? তীব্র কোনও চাহিদা কি তার রক্তে কিংবা বীর্যে ভেসে বেড়ায়? সে বুঝে উঠতে পারে না। “কী চাই” এর উত্তর মানুষ, সময় , গোধূলি এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নির্বিশেষে পাল্টে পাল্টে যায়। সবথেকে অসুবিধা হয় যখন তার নিজের কাছেই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। সে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে থাকে। এবং কখন যেন বোধের পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে যায় সে। শুধু মুণ্ডুটা বাইরে বেরিয়ে থাকে। সে অস্ফুটে কিছু একটা বলতে চায় কিন্তু পারে না। সে কি কাউকে খুন করে ফেলতে চায় নাকি আবার ফিরে যেতে চায় সেই এল ডোরাডোয়! তার চোখের বিস্ফার দেখে তা ঠাহর করা যায় না। তার ধড়হীন মুন্ডুতে স্ট্রিট লাইটের আলো এসে পড়ে। অনেক স্মৃতি তার মুছে যেতে থাকে ব্রেনের ধূসর অংশ থেকে। যে কারণে “কী চাই ” বলাটা আরও কঠিন হয়ে ওঠে। তার মনে পড়ে যায় স্যাভলনের গন্ধে চোবানো একটা করিডরের কথা। সেখানে শুধু মৃত্যুর গন্ধই পাওয়া যায় না, জনমের ছায়াও দেখা যায়। জন্ম আর মৃত্যুর রোল কল করে সাদা স্কার্ট পরা নার্সেরা। স্যাভলনের চোবানো গন্ধটা তার পিছু ছাড়ে না। জন্মের সময় মায়ের নাড়ি কাটার দৃশ্যটা সে কল্পনায় আনার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। তার কেবলই অঙ্কিতা বৌদির গায়কি আর স্ট্রেচড তলপেটের কথা মনে পড়ে। সে অনুভব করে তার চোখের পাতা অলস হচ্ছে না কিছুতেই। এবং সে অ্যালজোলাম খুঁজে পায় না। চর্বিবহুল স্থূলকায় এক নার্স খিঁচিয়ে বলে ওঠেন, ঘুমোয়নি কেন এরা সব? সকালে মেট্রন দিদি আসেন। তার সুদীর্ঘ ছায়া পড়ে করিডোরে। সে একটি কয়েন নিয়ে হেড টেল করে। তার পক্ষে গেলে….তার পক্ষে গেলে কী হবে সে নিজেও জানে না। সে বুঝতে পারে হেমন্ত ফুরিয়ে যাচ্ছে। এবার পাতা ঝরার পালা। সে দেখে করিডোরের পাশে অনেক পাখি বাসা বেঁধেছে। ওদের কোনও অসুখ নেই, তবু ওরা হাসপাতালে থাকে। 

Write a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loading...