কবিতাগুচ্ছ
তৈমুর খান



আজ নিহিত বিশ্বাস থেকে আলো জ্বলে 

🌱

স্বর্ণকমলগুলি ফুটে উঠলে 
রোজ স্বপ্নের ভেতর ঘুম ভাঙে
চেয়ে থাকি অনেক আকাঙ্ক্ষার পথে 
যেখানে বাঁচার অধিক বাঁচা জীবনকে ভেদ করে যায়

তীব্র বিষাদের জলে কতকাল ডুবে ডুবে গেছে
ভাসমান চাঁদের ছায়ায় জ্যোৎস্নালোকিত 
মৃত্যুর নৌকায় চেপে কোথায় চলেছি কিছুই বুঝিনি
শুধু পার্থিব আসক্তির গানে হৃদয় চেয়েছে নোনতা স্বাদ

যে ভাষায় কোনওদিন কথা হয়নি
সেই নীরব ভাষার কাছে দু’দণ্ড থেমেছি
লাজুক রমণীর মতো ভাষা তার কাছেও আমার প্রস্তাব ফোটেনি 
শুধু উৎসুক এক শূন্যতার প্রজ্ঞাপন বয়ে গেছে

আজ নিহিত বিশ্বাস থেকে আলো জ্বলে
আত্মমন্থনের পর্ব শেষ হলে এই নিঃস্ব ঘরদুয়ার খুলে 
প্রজ্ঞাপারমিতা যাওয়া-আসা করে
তার সঙ্গেই আমার বিবাহ, ক্রিয়াগুলি অভিনন্দন জানায় 

২ 

স্মৃতিরা সংকোচ নিয়ে বসে আছে

🌱

এখানে চেঁচাতে পারি না, কাঁদতে পারি না

অসহ্য রোজ কান ধরে ওঠ-বস করায়

অপমান রোজ আদর করে যায়


একটু একটু করে কাপড় খুলতে খুলতে

গ্রামও এখন শহর; রঙিন আর ঝলমলে ইশারায়

দু-চাকা চারচাকা এসে ঘনঘন হর্ন বাজায়


রাস্তার ধার ঘেঁষে কত দোকান

অনলাইনের বিজ্ঞাপন হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকে

বিরাট আয়নার সামনে বসে সেলুনে চুল কাটায় 


শালুক ফুল কোথায় গেছে?এই পুকুর সাঁতার শেখাত

তীরে গৌরী দাঁড়াত, সবুজ ফ্রকের সকাল…

বিকেলে সারি সারি তালবনে ধূপছায়া শাড়ি

 কলসি দোলাত কাঁখে


ডাহুক পাখির ডাকে ভোর ভোর ঘুম ভাঙা চোখে

খেজুর ঝরিয়ে ফিরতাম;

দুই চপ্পলে দু’রকম ফিতে, তাই চলে যেত

শীত নামলে গলায় বেড় দিয়ে বাঁধা মায়ের সুতি শাড়ি


ধুলো এবং ধান,গরুর গাড়িত চেপে আসত হই হই

নবান্নে আনন্দ ভাগ করে খেত কলাপাতায়

কোথা গেল সেসব ছিপের দিন? মাছ নেই, মাছ নেই

পুকুরও এখন পাকা বাড়ি!


শালিক পাখিরা আর উঠোনে আসে না

পুঁইমাচা নেই; জবা বেলি চামেলিরা সবাই বিবাহিতা!

স্মৃতিরা সংকোচ নিয়ে বসে আছে না লেখা বৃহৎ শূন্য খাতায়!

সন্ত্রাস

🌱

এ অরণ্যে নেমেছে সন্ত্রাস

আমরা সব দিশেহারা পাখি

আজ উড়ান ভুলে গেছি

খুঁটে খুঁটে খাই মৃত্যুশোক

মৃত্যু খেয়ে বাঁচি


অস্ত্রের গর্জন শুধু, রক্তে ভাসে হাসি

আমাদের নিরর্থ গান, অসমাপ্ত কাহিনি

আগুনের শিসে বাজে ধ্বংসের বাঁশি

ভাঙা আকাশের টুকরো, অন্ধ রজনী


আতঙ্কিত ছায়াদের আন্দোলিত ভাষা

আত্মগোপনের পথে ধর্মের প্রহারা…

কোন্ ধর্ম কিছুই বুঝিনি শুধুই যাওয়া-আসা

কৌশলী শিকারির অদ্ভুত শিকার আমরা!

উজ্জীবন

🌱

উজ্জীবন ফিরে আসে আমার পাড়ায়

উজ্জীবনের সঙ্গে আমারও প্রেম হয়

আজ আবার নতুন স্নান, নতুন গন্ধ

আত্মাও পরে নেয় নতুন পোশাক


পরিধি বাড়তে থাকে আকাশ ও মাটিতে

নতুন সংকেত আসে অধিক জীবনের

সমস্ত সহজ পথে দেখি

উজ্জীবন বাঁশি বাজায়


উজ্জীবনের সুর চুরি করি আমি

উজ্জীবনের রঙে নিজেকে রাঙাই


আজ কোনও অসহ্য মেঘ নেই

ঘোর বজ্র নেই মর্ম আকাশে

চৈতন্য দাঁড় টানে কিশোরী নদীতে

তীরে তীরে ফলবতী আকাঙ্ক্ষার গাছ

ধর্মগ্রন্থ

🌱

তুমি আর একবার এলে দেখে যেতে পারতে

আমাদের বন্ধুত্ব কত বৃদ্ধ হয়ে গেছে।

এখন সিঁড়ি দিয়ে নামলে মনে হয়

পাতালে নেমে যাচ্ছি ।

এখন সিঁড়ি দিয়ে উঠলে মনে হয়

আকাশে উঠে যাচ্ছি।


এখন সব কথা প্রার্থনা হয়ে যায়

এখন সব বিশ্বাস ঈশ্বর হয়ে যায়

এখন তুমিও ঈশ্বরী হয়ে গেছ


আলো পড়ছে পড়ুক

এখন সকল কবিতাই আমার ধর্মগ্রন্থ।

Write a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loading...