কবিতাগুচ্ছ
দীপ্তেন্দু জানা
ঘৃণায় পড়েছি আজ
পড়েছি তোমার প্রেমে– উঠতে পারিনিদিয়েছো দু’হাতে হত্যা– ভস্মমেশা জলআকন্ঠ করেছি পান– জেনো,আমি ঋণী
চোখ থেকে ঝরে কফ–কফের ছোবল ছোবলে ছোবলে মন বরফের তাপঅন্তরে একটি ফুল ঘৃণিত প্রবল
শুনেছি প্রেমেতে কোন রাখা নেই পাপআকাশে জ্বালিয়ে মোম চন্দনকলমেঈশ্বরই লেখেন সব প্রেমের সংলাপ
ঘৃণায় পড়েছি আজ– ক্রমশ ও ক্রমে উচ্চতা কমছে দ্রুত– তিন-চার গুনহয়েছি বামন যেই চাঁদে রোদ জমে
আসলে আমিতো নয়— ভালোবাসা খুনঅন্তত কবরে দিও এক মুঠো নুন
ক্যাকটাস একটি বামপন্থী গাছ
আপনি মার্ক্স ?
ক্যাকটাস কিন্তু পড়েনি আপনার দাস ক্যাপিটাল
আপনি কমিউনিস্ট? শোষণের বিরুদ্ধে আপনার লড়াই?
ক্যাকটাস কিন্তু পার্টিঅফিসে যায়নি কোনদিনপলিটব্যুরো কী ও জানেই না
জানেন,পৃথিবী জুড়ে কমিউনিজম ফেইল করেছে?
কে বলল?তাহলে এখনো হাওয়ার গায়ে কারা আজও লেখে– বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক?
জানেন মার্ক্স আপনি মারা গেছেনকিন্তু আজও কারও কারও বুকে বেঁচে আছে আপনার দর্শন তাই নাকি?
হ্যাঁ কমরেডআপনি হয়তো জানেন না– ক্যাকটাস একটি বামপন্থী গাছ
হেরে যাওয়া পরিবেশ জানে– সুতীক্ষ্ণ কাঁটাগুলো ওর শ্রেনীসংগ্রাম
আর ধবধবে সাদা কুঁড়ি– ওটাই সমাজতন্ত্রের পূর্বাভাস
সমানতা
সমানতা আসবে কিনা আপনারা বিতর্ক করুন
বেঁচে থাকার জন্য বাতাস
পানের জন্য জল
আহারের জন্য ফল
দেখার জন্য আলো
ঘুমের জন্য অন্ধকার
ভালোবাসার জন্য পুরুষের নারী,নারীর পুরুষ
হাঁটার জন্য রাস্তা
উপভোগের জন্য ফুল আর সঙ্গীত
ভেদের জন্য রহস্য
এসব কারো বাপের জমিদারি নয়
শাসক চেয়ারপ্রিয়কিন্তু জেনে রাখুনঈশ্বর সমানতায় বিশ্বাসী
কলিযুগ
অশিক্ষিত ঠাকুমাদের মুখেই মানাত ওসব
কলিযুগ-ফলিযুগ যত্তসব ব্যাকডেটেড ধারণা
কখনো আমার শত্রু আমার ছায়াটিকে খুন করে পুঁতে দিচ্ছে কালের গর্ভে
কখনো আমি আমার শত্রুর ছায়াকে খুন করে লটকে দিচ্ছি পেন্ডুলামে
সময়ের আর দোষ কী বলো
গঙ্গার ঘাটে সে তো রক্তের কটু দাগহাত ঘষে ঘষে ধুয়ে চলেছে ভোর থেকে
এসবে হেলদোল নেই বলেই সে গঙ্গা সে গর্ভবতী
চোখ
পথের এক বিন্দু রক্ত শুধু আমার নয়— সকলের
কাঁটা ভরা বাবলা গাছে ফুটেছে লাজুক হলুদ
কোন ভোরে রওনা হয়েছিপা টিপে টিপে পার হচ্ছি নড়বড়ে সাঁকোএকে ওকে জিগ্যেস করছি– সুন্দরগ্রামের দরজা কোথায়?
তির তির আবহমানে ছিটকে পড়ছে সাময়িক দৈর্ঘ্য
অদূরেই চারকোণা রোদহাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে কাটা ধান
ব্রহ্মাণ্ডের দীর্ঘতম দড়ি আর গুনগুন দিয়ে
চাষিবৌ বেঁধে নিচ্ছে আলুথালু আরসমকাল
নদী
গায়ের রং নদীর মতো বলে কেউ কেউভাবে আমি কেন মাটি হতে পারিনি
আমার জিভ থেকে একটা নদী বয়ে গেছেপাড়ার নারানদা সাইকেল নিয়ে রোজ নৌকা পেরোয়
এক নদীতে দু’বার চান করতে নেই–লোকে নাকি বলে
আজ নিজেকে কেটেকুটে ছড়িয়ে দিচ্ছি একান্ন পীঠে
যদি কেউ বোঝে–নদী আসলে অজস্র সমকাল
পরম
একাই চলেছে রাস্তা– হাঁটছে একাকীআমাকে যেতেই হবে হাত ধরে তার
প্রেমিকা পথের ধুলো– সে আমার সাকি
বেপথু হইনি আমি– জোনাকি পোকারআলোয় দেখেছি মুখ আমি আরশিতে আয়না প্রকৃত কবি–আমিতো জোকার
বর্ণকে নকল করি– অলৌকিক মিথেদৃশ্যকে নকল করি– বাজাই শানাইস্রোতকে নকল করি– মেশাই সঙ্গীতে
আমার শিক্ষক পথই– ছুঁয়ে আছি পাইবৃত্তের কোথায় কেন্দ্র– হে আমার ভ্রমতারই নিয়ে তাকে দিই– ঈশ্বর হাসাই
একাই চলেছে রাস্তা– উদাসী খড়মআমাকে শরীরে নাও আমার পরম
পূজা
আমার সকল পূজা তুমি ছাড়া ফাঁকিতোমাকে দেখেছি আমি নদীর দুপারেতোমারই অক্ষরজবা তোমার পায়ে রাখি
লেখাই আমার পূজা– যাইনি মাজারেহৃদয় আমার মন্ত্র– সঁপেছি নিজেকে কাগজে আসন পেতে– মরি বারে বারে
গড়ায় সময়জল– চলে এঁকে বেঁকে প্রকৃত আনন্দ তুমি– প্রকৃত বেদনাতোমাকে লিখছি আমি অন্ধকার ছেঁকে
সুন্দর লীলায় মগ্ন– জলে ঢেউ বোনাতোমাকে বাঁধতে পারি? আমি তো আনাড়ি মানুষ কতটা পারে– আকাশ তো লোনা
অক্ষর-আড়াল থেকে পুষ্পবাণ মারিহে লেখা, তুমিও হও ঈশ্বরশিকারী