অথ তেলাপোকা-ঘটিত
পল্লব চট্টোপাধ্যায়
খুন না হার্টফেল
‘কি রে, ওয়েবক্যামের ফুটেজটা উদ্ধার হল?’
‘আজ রাত্রের মধ্যেই হার্ড-ডিস্ক থেকে রিকভার হয়ে যাবে। চিনে-ছোকরা লিং খুব এক্সপার্ট এ ব্যাপারে। তবে আমাদের এসব বুঝতে অনেক দেরি হয়ে গেছে রে, জানি না আজ রায় বেরিয়ে গেলে কী হবে!’
‘ঠিক। কে বিশ্বাস করবে যে অফিসের মধ্যে ক্লারার হার্টফেল করাটা আসলে খুন, দুর্ঘটনা নয়। ইন ফ্যাক্ট, এই আরশুলার গল্পটাকে কোর্ট হাস্যকর মনে করছে। নিউইয়র্কের ব্রংক্সের মত জায়গার একটা সফিস্টিকেটেড অফিসে এতগুলো আরশুলার একসাথে আবির্ভাব যে একটা দুর্ঘটনা হতে পারে না, সেটাই কোর্টকে বোঝাতে পারেনি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির উকিল। এই মুহূর্তে কোনও সলিড সাক্ষ্যপ্রমাণ দেখাতে না পারলে আজই রায় শোনাবেন জজসাহেব। এখন একমাত্র ভরসা ক্লারার ল্যাপটপের ওয়েব ক্যামেরার রেকর্ডিং, যদি কিছু থাকে তাতে। তবে অফিসের মেঝেয় ছিটকে পড়া ল্যাপটপের হার্ড-ডিস্কটা এমনভাবে ভেঙেছে, এখন ভরসা ভাগ্য আর লিং-এর হাতযশ!’
‘চিন্তা করিস না, সব মেয়েই আরশুলাকে ভয় পায় না, আর ডায়না তো ডাইনোসর নিয়ে লোফালুফি খেলার মানুষ। দেখিস, ও ঠিক কিছু একটা করবে।’
কথা হচ্ছিল অক্সিডেন্টাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ক্লেম ইনভেস্টিগেশন টীমের দুই অফিসার রেইনডিয়ার আর আইসবার্গের মধ্যে। নামগুলো আসল নয়- আদরের ডাকনাম! ওরা আসলে র্যান্ডি ড্রেক আর আশিস বারিক, বন্ধুত্ব খুব ঘনিষ্ঠ তিনজনের মধ্যে। ও হ্যাঁ, তৃতীয়জন তাদের সুন্দরী ও ততোধিক সাহসী সহকর্মী ডায়না। স্পেন্সার বা পামার নয়, টেলার- অবশ্য সেটা তার আসল নামই। ঘটনা হল, ওদের কোম্পানির হালের সাফল্যের মূলে ছিল একটা নতুন বীমা প্ল্যান- ‘ইউ অর মী, বেব!’ চাক ব্যারিসের লেখা একটা জনপ্রিয় উপন্যাস ‘ইউ অ্যান্ড মী, বেব’ থেকে ওরা নামের আইডিয়াটা পেয়েছে। প্ল্যানটা হল স্বামী-স্ত্রীর মিউচুয়াল বীমা অর্থাৎ স্পাউসদের কেউ একজন মারা গেলে অন্যজন পাবে ডেথ বেনিফিট। ক্লারা আর ওর স্বামী ডেভিড জনসন মিলিয়ন ডলারের এই পলিসি কিনেছিল বছর-দুই আগে। আইসবার্গের চেহারা বিশাল হলেও মাথা বরফের মতই ঠাণ্ডা আর উপস্থিতবুদ্ধির অভাব নেই। তার মাথাতেই প্রথম আসে যে ক্লারার মৃত্যুটা স্বাভাবিক নয়, ডাক্তার স্বাভাবিক হার্টফেল বলে জানালেও।
টাকার দাবীটা মৃত্যুর ঠিক সাতদিন পরে আসে জনসনের তরফ থেকে। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর নিয়মমাফিক পলিসি নেওয়ার একবছরের মধ্যে ক্লায়েন্টের স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও একটা তদন্ত হয় কোম্পানির তরফ থেকে। আর মিলিয়ন ডলার বা তার বেশি মূল্যের পলিসির ক্ষেত্রে সে তিনবছরের মধ্যে মারা গেলেও সেটা তদন্তসাপেক্ষ। অবশ্য এটা মার্জিনাল কেস, আপাতদৃষ্টিতে খুন বা আত্মহত্যা নয়, এমনকি ঠিক দুর্ঘটনাও বলা যায় না। পঁয়ত্রিশ বছরের একজন মহিলার একা অফিসে কাজ করতে করতে হঠাৎ হৃদ্স্পন্দন বন্ধ হয়ে মৃত্যু হতেই পারে, বিশেষতঃ কিছুটা উচ্চ-রক্তচাপের সমস্যা থাকলে।
সবই ঠিক ছিল, গোলমাল বাধাল ক্লারার হার্টফেলের পর অফিসের সিক্যুরিটি স্টাফের বয়ানে অফিসের মধ্যে বেশ কিছু আরশুলার অস্বাভাবিক উপস্থিতির কথা। পুলিশ অবশ্য সে সব নিয়ে মাথা ঘামায়নি। ঘামাবেই বা কেন?
আইসবার্গের বইপড়া অভিজ্ঞতা বলে পুলিশ স্বভাবতই একটু মাথামোটা হয়, ডয়েলের ইন্সপেক্টার লেসট্রেড থেকে শুরু করে হেমেন রায়ের সুন্দরবাবু, শরদিন্দুর বিধুবাবু- এঁরা প্রত্যেকেই কল্পনাশক্তিহীন বিশালকায় যন্ত্রবিশেষ।
তারই কি কিছু সন্দেহ হত, ক্লায়েন্টের মৃত্যু সময়ের আগে না হলে!
সান্ধ্য খবরের কাগজে রেইনডিয়ারই খবরটা পড়ে। হেডকোয়ার্টারের বার্ষিক রিপোর্টে মিলিয়ন ডলারের পলিসির ব্যাপারটা সে সেদিনই দেখেছিল। কোম্পানির ইতিহাসে এত বড় অঙ্কের ব্যক্তিগত পলিসি এই প্রথম। তারপরেই এই সংবাদ, সন্দেহ তো হবেই। মোটিভ স্পষ্ট কিন্ত প্রমাণ নেই আর আমেরিকায় সময়ের দাম আছে, কোর্ট এত সময় দেবে না। একটাই সূত্র ছিল- ওয়েব-ক্যামে কিছু রেকর্ড হয়ে থাকলে। কোম্পানির গোপন সিস্টেমে ল্যাপটপ যতক্ষণ অন থাকবে রেকর্ডিং চালু রইবে, সামনে কেউ না থাকলেও। ‘এই নিয়মটা আপনি জানতেন?’ ক্লারার স্বামী জনসনকে প্রথম প্রশ্ন ডায়নার, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে তাকেই পাঠিয়েছিল টিম-লিডার আইসবার্গ।
‘হ্যাঁ, কেন জানব না!’ জনসনের এই জবাব শুনে আশাহত হয়ে পড়েছিল ডায়না। অফিস ফেরার পর সে যখন আইসবার্গকে রিপোর্ট দিচ্ছিল তখনই রেনডিয়ারের চোখে পড়ে ডায়নার জুতোর তলায় আটকে থাকা স্টিকারটা। কোন নাম নেই, শুধু ম্যানহাট্টানের চায়না টাউনের একটা ঠিকানা আর একটা নম্বর। দেখা গেল সেটা একটা চিনে ড্রাগ কোম্পানির ফোন নম্বর। ফোন ধরেছিল দোকানের মালিকের ছেলে চ্যাং, কম্প্যুটারের ওস্তাদ। ভাঙা ডিভিডি- ডিজিক্যাম-হার্ডডিস্কের ডাটা রিকভার করতে পারে নাকি সে।
আদালতে আরশুলা
তিনদিন পরের কথা। ৬ই জুন ২০২২, সোমবার। ফোলি স্কোয়ার সাদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টহাউস, ম্যানহাট্টান, নিউইয়র্ক। কোর্টের কাজ চলাকালীন কোর্ট-রিমে শ’খানেক আরশুলা ছাড়ার অপরাধে পুলিশ কাঠগড়ায় তুলেছে অক্সিডেন্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির গোয়েন্দা বিভাগের কর্মচারি মিস ডায়না টেলারকে। হয়তো তার বিচার এই আদালতে হওয়ার কথা ছিল না, কিন্তু বিবাদীপক্ষের প্রতিনিধি হয়ে আদালতের কাজে বাধা দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে, তাই জাজ সঙ্গত কারণেই তাকে এই কোর্টেই প্রডিউস করতে বলেন। পুলিশ তার এই কাজের ব্যাপারে ক্লু-লেস, জাস্টিস মার্শালও তাই। শুধু অক্সিডেন্টালের উকিল মিঃ স্টোন মৃদু মৃদু হাসছেন, কী হতে চলেছে তাই ভেবে।
হ্যাঁ, শুক্রবার ৩রা জুন আদালতে হাজির ছিল ডায়না, বীমা কোম্পানির তরফে অন্যতম সাক্ষী হিসেবে। বাদীপক্ষের উকিল মিঃ প্যাটেল তখন বুঝিয়ে চলেছেন কিভাবে অন্যায় অভিযোগে অক্সিডেন্টাল কোম্পানি তাঁর ক্লায়েন্ট ডেভিড জনসনকে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করতে চাইছে।
‘ইয়োর অনার, আমার ক্লায়েন্টের দাবী সঙ্গত। বিবাদীপক্ষের উকিল মাই লার্নেড ফ্রেন্ড মিঃ স্টোন বলতে চাইছেন যে ক্লারার স্বামী মিঃ জনসন নাকি শ’খানেক আরশুলা গোপনে পুরে দেন মিসেস ক্লারা জনসনের টিফিন বক্সে, বাক্স খুলে তাই দেখেই তিনি ভয়ে হার্টফেল করেন। এই অভিযোগের কি কোন ভিত্তি বা প্রমাণ আছে?’
‘কেন, সিক্যুরিটি স্টাফ দিয়েগোর সাক্ষ্যে তো জানা গেছে সেদিন অপ্রত্যাশিতভাবে প্রচুর আরশুলা দেখতে পাওয়া গেছে ব্রংক্সের শপিং মলের ম্যানেজারের অফিসে, যেখানে কাজ করতেন ক্লারা জনসন। ক্লারার মেডিক্যাল হিস্ট্রি বলে যে তাঁর হাইপারটেনশান ছিল, প্রেশারের ওষুধ খেতেন নিয়মিত। অবশ্য সেদিন তিনি নাকি ওষুধের বাক্সটা খুঁজে পাননি তাই খাননি, তাঁর কলিগ স্টেলা পুলিশকে জানান। ওষুধের বাক্স লুকিয়ে ফেলাটাও হয়ত চক্রান্তের অংশ!’
‘আসলে আমার বন্ধু একটা নামকরা বিজনেস সংস্থাকে ডিফেন্ড করছেন, তাই সঙ্গত কারণেই ভিক্টিমের ওষুধ না খাওয়া, অফিসে আরশুলা পাওয়া আর পলিসি নেবার দু’বছরের মধ্যে ইনস্যোর্ডের মৃত্যু হওয়া- এই সব কিছুর মধ্যেই চক্রান্ত দেখতে পাচ্ছেন। তাঁকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে শপিং মলের নিচের তলায় একটি ফুড কোর্ট আছে, আরশুলা সেখান থেকেও আসতে পারে। মিস টেলার ইতোমধ্যেই পলিসি সম্বন্ধে সব বিবরণ জানিয়েছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন যে আরশুলা দেখে ভয় পেয়ে ক্লারা হার্টফেল করে মারা গেছেন, অতএব এটা অস্বাভাবিক মৃত্যু বা হত্যাকাণ্ড। আমি আশা করব বিবাদী পক্ষের উকিল এর সপক্ষে কিছু সাক্ষ্যপ্রমাণ খাড়া করবেন।’
এতদূর শুনে মিঃ স্টোন উপায়ান্তর না দেখে চুপ করে যান, কারণ সত্যি তো আরশুলার কারণে হার্টফেল করে মৃত্যু ঘটলেও সেটা স্বাভাবিক যদি কেউ ইচ্ছে করে আরশুলা না ছেড়ে থাকে। টিফিন বাক্সে আরশুলা ছিল তার প্রমাণ কই, কে ভরেছে তার হদিস কই? সব ভেবেচিন্তে জজ মার্শাল জানালেন যে আদালতের সময়ের দাম আছে, একঘন্টার মধ্যে কোন সাক্ষী-প্রমাণ জোগাড় না হলে কেস ডিসমিস করা হবে, অর্থাৎ ঠিক তিনটের মধ্যে রায় দেওয়া হবে।
বলা বাহুল্য, রায় জনসনের পক্ষেই যাবে- মানে অক্সিডেন্টালের মিলিয়ন ডলার ক্ষতি!
তারপর ঠিক দু’টো বেজে পঞ্চাশ মিনিটে আদালত কক্ষে ছড়িয়ে পড়ল শতাধিক জ্যান্ত তেলাপোকা। জাস্টিস মার্শালের রোবের মধ্যে গিয়ে ঢুকল গোটা পাঁচেক। আদালতের কাজ বন্ধ হয়ে গেল। বেশি খোঁজ করতে হল না, ধরা পড়ল ডায়না সুন্দরী, তার হাতব্যাগের মধ্যে পাওয়া গেল একটা বড়সড় পলিপ্যাক, ঠিক যেরকম ক্লারার টিফিন বাক্সে পাওয়া গেছিল। ডায়না গ্রেফতার হল আর আরশুলার প্যাকেটটি- তখনও গোটা-দশ রয়ে গেছিল তার মধ্যে, বাজেয়াপ্ত করল পুলিশ। সব দেখে শুনে একটা পরিতৃপ্তির হাসি হাসল ডায়না। অনেক কষ্টে সিক্যুরিটির নজর এড়িয়ে আরশুলার ব্যাগটা আনতে পেরেছে আদালতে। সে নিশ্চিত যে কোন পুরুষ এত সহজে নিষ্কৃতি পেত না, তাই তাকে পাঠাবার প্ল্যানটার জন্যে মনে মনে আইসবার্গের তারিফ করল সে।
বিউটি উইথ ব্রেইন
জজসাহেব আদালত বন্ধ করে কেটে পড়লেন, ফিউমিগেশনে ঘণ্টা দুই সময় লাগবে। কোর্টরুম খালি করা হল, আদালত খুলবে সোমবার ছয় তারিখে, হাতে দু’তিনদিন সময়। খবর পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল অক্সিডেন্টালের টাইম স্কোয়ার অফিসে অপেক্ষারত দুই মহারথী আইসবার্গ আর রেনডিয়ার। তাদের এখন অনেক কাজ, সর্বপ্রথম ডায়নার জামিনের ব্যবস্থা করতে হবে আর তেসরা থেকে পাঁচই জুন কাটবে অসম্ভব ব্যস্ততার মধ্যে। এবার তবে ফিরে আসা যাক ছ’তারিখের সকালবেলার কোর্ট প্রসিডিংএ। এদিন কোর্টরুমে এসেছে অক্সিডেন্টালের দুই গোয়েন্দাপ্রবর, যাদেরকে আমরা রেইনডিয়ার আর আইসবার্গ বলে জেনেছি। এসেছেন কোম্পানীর আরো কিছু উচ্চপদস্থ কর্মচারি, বোর্ড অফ ডাইরেক্টার্সের জনা দুই সদস্য ও ম্যানেজিং ডিরেক্টার ডাঃ হেটমেয়ার। তাঁরাও যথারীতি উত্তেজিত ঘটনাক্রমের পারম্পর্যে, অথচ আইসবার্গকে শুধিয়েও তাদের কাজের প্রণালীর কোন সঠিক হদিস পাননি কেউ। পাবেনই বা কিভাবে? আইসবার্গ তো জানে সবই অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়া, লাগে কিনা কে জানে! তার উপর ডায়নাকে পুলিশ বুক করেছে এক অমার্জনীয় অপরাধে, তারও সঠিক জবাব দেওয়া প্রয়োজন। আজ ডাকা হয়েছে ব্রংক্স শপিং মলের ম্যানেজার মিঃ ডেভিডসন আর ক্লারার সহকর্মী স্টেলাকে, তাঁদের সাক্ষ্যেরও প্রয়োজন আছে। জাস্টিস মার্শাল এসে গেছেন, সবাই উঠে দাঁড়াল, কোর্ট চালু হবে।
‘তাহলে, মিস টেলার, মহামান্য আদালতকে কি জানাবেন থার্ড জুনের অপরাহ্নে কেন বা কার প্ররোচনায় আপনি শ’খানেক আরশুলা ছেড়েছিলেন আদালতকক্ষে?’ জেরা শুরু করলেন বাদীপক্ষের উকিল মিঃ প্যাটেল।
‘একশো নয়, ইয়োর অনার, প্রিসাইজলি স্পিকিং একশো পঞ্চাশ, এই তার রসিদ’- কাগজটা জজকে পেশ করেন মিঃ স্টোন। – ‘হুম, চায়না টাউন, ম্যানহাট্টান’- বলে পুলিশের জমা করা পলিপ্যাকটার স্টিকার দেখে ঠিকানা মিলিয়ে নেন জাস্টিস মার্শাল।
‘প্লিজ আনসার টু মাই কোয়েশ্চান মিস টেলার।’
‘ইয়োর অনার, এই কেসটা যে অ্যাক্সিডেন্টাল ডেথ নয়, বরং ডেলিবারেট হত্যাকাণ্ড তার কিছু আভাস আমরা পেয়েছি যার ফলে এটা সিম্পল ক্লেম রিলেটেড নয় তাই জানাতে চেয়েছিলাম মহামান্য আদালতকে। কিন্তু আমাদের অনুমানকে প্রমাণে পরিণত করতে হলে কিছু সময়ের দরকার ছিল যা আদালত দিতে চায়নি, তাই এই পথ নিতে হল।’
‘কিন্তু এই বিচিত্র পদ্ধতির মানে কী?’
‘তাহলে স্যার আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই আপনার গতসপ্তাহের প্রসিডিং-এ করা একটি উক্তি- হোয়াট ক্যান এ কক্রোচ ডু? এখন দেখলেন তো হোয়াট এ কক্রোচ ক্যান ডু! দুঃখিত ইয়োর অনার, এই সময়টা আমাদের সত্যিই দরকার ছিল আমাদের কোম্পানিকে মিলিয়ন ডলার ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে, সেইসঙ্গে সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে আসল অপরাধীকে চিহ্নিত করতে।’
‘ইয়োর অনার, আমি উইটনেসকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই’- স্টোন অনুমতি চাইলেন। আদালত রাজি হলে তিনি ডায়নাকে শুধোলেন, ‘মিস টেলার, এই চায়না টাউনের গল্পটা একটু বুঝিয়ে বলবেন?’
‘আমি গত সপ্তাহে অনুসন্ধানের কাজে মিঃ জনসনের অ্যাপার্টমেন্টে গেছিলাম। তিনি আরশুলা সম্বন্ধে যাবতীয় খবর অস্বীকার করেন। কিন্তু তাঁরই বাসা থেকে আমি উদ্ধার করি একটি স্টিকার যার অনুরূপ একটি স্টিকার আমার আনা আরশুলার প্যাকেটে লাগানো ছিল।’
‘আশ্চর্য! আ স্ট্রেঞ্জ কোইন্সিডেন্ট!’
‘নট অ্যাট অল স্যার। আমার কলিগ আইসবার্গ ওই ঠিকানা আর ফোন নম্বর থেকে খুঁজে বের করেন চায়না টাউনের এক চিনে আরশুলা সাপ্লায়ারকে, আর ঘটনাচক্রে জানা যায় যে সেখান থেকেই দু’সপ্তাহ আগে মিঃ জনসন একশো আরশুলা কেনেন। এরপর আমি সেখানে গিয়ে আরো দেড়শো আরশুলা কিনে নিয়ে আসি, কেন তা তো জানেনই।’
‘অবজেকশন ইয়োর অনার! ইট প্রুভস নাথিং। আরশুলা কেনা মানেই খুন করা নয়। ইন ফ্যাক্ট, আমার ক্লায়েন্টের জানার কথাই নয় যে আরশুলা দিয়ে খুন করা যায়!’
– ‘অবজেকশন সাস্টেনড। এটা কোন প্রমাণ হল না মিঃ স্টোন। হ্যাঁ এভিডেন্স হিসেবে আমি নোট করছি, তাকে প্রমাণে পরিণত করা আপনার দায়িত্ব।’
আইসবার্গ ও চায়না টাউন
এবার ডাকা হল ক্লারার কলিগ স্টেলাকে। স্টোনের প্রশ্নের উত্তরে সে বলল, ‘ক্লারার সাঙ্ঘাতিক ভয় ছিল আরশুলাতে। একবার ফেসবুকে একঝাঁক কক্রোচের ছবি দেখে ও প্রায় ফেন্ট হয়ে গিয়েছিল, ফেসবুক দেখাই ছেড়ে দিল তার পর থেকে!’
‘কিন্তু এই ব্যাপারটা যে মিঃ জনসন জানতেন সেটা আপনার কিভাবে মনে হল?’
‘এটাও ক্লারাই বলেছে। একদিন বাসায় একটা আরশুলা দেখে সে এমন হাত-পা ছুঁড়তে শুরু করে যে ওর হাবি ঠাট্টা করে বলে ক্লারাকে খুন করতে হলে গুলিগোলা লাগবে না, একমুঠো আরশুলাই যথেষ্ট। আমরা খুব হেসেছিলাম সে কথা শুনে।’
‘আচ্ছা ক্লারা কি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খেতেন? মারা যাওয়ার দিন খেয়েছেন কিনা আপনি জানেন কিছু?’
‘হ্যাঁ, হাইপারটেনশন ছিল, ওষুধ খেত নিয়মিত। কিন্তু সেদিন অফিস আসার আগে ওষুধের বাক্সটা খুঁজে পায়নি, তাই খেয়ে আসতে পারেনি বলে জানিয়েছিল।’
‘আর একটা কথা। আপনাদের অফিসিয়াল ল্যাপটপে দিনের সব ভিডিও-কথাবার্তা রেকর্ড হয়, সে খবর জানেন?’
‘কই, এরকম কিছু জানিনা তো!’
‘ইয়োর অনার, আমার লার্নেড ফ্রেন্ড মিঃ প্যাটেল ধরেই নিয়েছেন যে মিঃ জনসনের ক্লেম সঙ্গত, ডেথ বেনিফিট তাঁর প্রাপ্য। অক্সিডেন্টালের প্ল্যান ‘ইউ অর মি বেব’ অনুযায়ী হয়ত তিনি ঠিক। কিন্তু পলিসি ডকুমেন্ট ক্লজ 12-B সাবক্লজ 2 অনুসারে ভিক্টিমের অস্বাভাবিক বা পলিসি কমেন্সমেন্টের তিন বছরের মধ্যে মৃত্যু হলে সেটা তদন্তসাপেক্ষ। তাই পুরো ঘটনাক্রম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাজিয়ে তুলে আদালতকে জানাবার জন্যে ডেকে নিচ্ছি অক্সিডেন্টালের ক্লেম ইনভেস্টিগেটার মিঃ বারিককে। উনি ঘটনাক্রম সাজিয়ে পেশ করবেন। প্রয়োজনে অন্য সাক্ষীদের ডাকবারও অনুমতি চাই মহামান্য আদালত।’
আইসবার্গ তার বিশাল শরীরটাকে নিয়ে ক্ষিপ্রগতিতে উঠে দাঁড়াল বক্সে।
‘ইয়োর অনার, যে কোন বড় অঙ্কের পলিসি পেলে আমার কোম্পানির উপরমহল খুশি হয়, সংশ্লিষ্ট ম্যানেজারের পদোন্নতি হয়, কিন্তু আমাদের ডিপার্টমেন্টের কাজ বেড়ে যায়’- বলে হাসল আইসবার্গ। আদালতে হাসির রোল উঠল।
‘অর্ডার অর্ডার! কাজের কথায় আসুন। এক্ষেত্রে আপনি কী অসামঞ্জস্য দেখলেন আদালতকে খুলে বলুন।’
‘নিশ্চয় বলব ইয়োর অনার। বিশাল অঙ্কের পলিসি শুরু হওয়ার দু’বছরের মধ্যে, তাও আবার দ্বিতীয় বছরের প্রিমিয়াম ডিউ হবার আগে যদি পলিসি-হোল্ডারের মৃত্যু হয়, স্বভাবতই তাকে আমরা সন্দেহের চোখে দেখি। আমার প্রথম সন্দেহ হয় অফিসে আরশুলার খবর শুনে। তারপর স্টেলার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি ক্লারার আরশুলা-ভীতির, হাইপারটেনশন সত্ত্বেও সেদিনের ওষুধ না খাওয়ার কথা। কিন্তু এসব যুক্তি আদালতে টিকবে না জানতাম। তাই ডায়নাকে তদন্তে পাঠাই মিঃ জনসনের বাসায়, একজন সুন্দরীকে দেখে যদি বেফাঁস কিছু বলে ফেলেন এই আশায়।’
‘সে বিউটি উইথ ব্রেইন, আইসবার্গ’- পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলে ডায়না, আদালতে আবার হাসির হুল্লোড় ওঠে।
‘অর্ডার অর্ডার! গো অ্যাহেড, প্লীজ।’
‘না, সতর্ক ছিলেন জনসন, তেমন কিছুই বলেননি। তবু বেশ কিছু ক্লু পাওয়া যায় সেখান থেকে। উনি নাকি ক্লারার আরশুলা-ভীতির কথা জানতেন না, সেটা মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। ক্লারা সেদিন ওর ওষুধের বাক্স খুঁজে পায়নি, সেটাও তার বেডসাইড ডেস্কেই রাখা দেখেছে। তাছাড়া জনসন নাকি জানতেন যে ব্রংক্স মলের ম্যানেজারের অফিসে প্রত্যেক স্টাফের ল্যাপটপ অন করা মাত্র রেকর্ডিং হতে শুরু করে- ম্যানেজার মিঃ ডেভিডসন কিন্তু আমায় জানিয়েছেন যে রেকর্ডিংএর কথা একমাত্র তিনি ছাড়া তাঁর কোন সাবঅর্ডিনেট জানত না। তিনি আদালতে আছেন, প্রয়োজনে সত্যিটা জেনে নিতে পারেন। তবে সবচেয়ে বড় ক্লু ছিল চায়না টাউনের ড্রাগ কোম্পানির একটা স্টিকার, যাতে একটা ফোন নম্বর ছিল। নম্বর ডায়াল করতেই ওপ্রান্তে ফোন তুলেছিল লিং নামে এক চিনে ছোকরা। সে কম্প্যুটার মেকানিক, তার বাবা লি সুন চিনা ড্রাগ আর পোকামাকড় বিক্রি করেন। চিনে হোটেলগুলোতে, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি, কসমেটিক ইন্ডাস্ট্রি, এন্টোমলজি ল্যাব, স্কুল-কলেজের ল্যাব ইত্যাদিতে আরশুলা, উইচিংড়ি, ফড়িং, পিঁপড়ে আর পঙ্গপাল সরবরাহ করার তাঁদের একচেটিয়া ব্যবসা, অ্যালবানির কান্ট্রিসাইডে আছে ব্রিডিং ফার্ম।’
‘বলেন কী? হোটেলেও আরশুলা?’ চোখ কপালে ওঠে স্বয়ং বিচারপতির।
‘আজ্ঞে হ্যাঁ, চিন আর ফার-ইস্টের দেশগুলোতে এসব পোকামাকড় খুব জনপ্রিয় খাবার, আমরা যাকে এন্টোমোফ্যাগি বলে থাকি। লিং আর মিঃ সুন দুজনেই আছেন আজ আদালতে, দরকারে তাঁরাও সাক্ষী দেবেন। মিঃ সুন জানিয়েছেন যে তিনি গত মাসের ১৬ই একশো আরশুলা বিক্রি করেন মিঃ জনসনকে। তিনি কী কারণে এটা কেনেন তা নিয়ে কিন্তু আলোকপাত করেননি বাদীপক্ষের উকিল, বরং পুরো ঘটনাটাই চেপে যাওয়া হয়।’
‘অবজেকশন ইয়োর অনার!’ মিঃ প্যাটেল হঠাৎ চিৎকার করে ওঠেন। ‘কী বলতে চাইছেন এই ডিটেকটিভ? আমার ক্লায়েন্ট সেদিন ওঁর স্ত্রীর অফিসে গিয়ে একশো আরশুলা ছেড়ে দিয়ে আসেন? নিজের স্ত্রীকে হঠাৎ কেউ মারতে যাবে কেন, আর যদি মারতেই হয় আরশুলা কি কোন স্বীকৃত খুনের অস্ত্র? কোন সাক্ষী বা প্রমাণ আছে?’
‘এক এক করে জবাব দিই? না, মিঃ জনসন শপিং মলে যাননি। তিনি শুধু লি সুনের দোকান থেকে কেনা আরশুলার প্যাকেট থেকে স্টিকারের লেবেলটা ছাড়িয়ে খাবারের বদলে প্যাকেটের মুখটা খুলে সন্তর্পণে ভরে দেন ক্লারার টিফিনবাক্সে। সেই লেবেল ডায়না উদ্ধার করে জনসনের বাসা থেকে, স্টিকারের আঠা আর ক্লারার ব্যাগের প্যাকেটে লেগে থাকা আঠা পুলিশের ফোরেনসিক ল্যাব মিলিয়ে দেখেছে, তাছাড়া স্টিকারের সাইজের সঙ্গে আঠার দাগের সাইজও মিলে গেছে। আমার সন্দেহ, ক্লারা টিফিনটাইমে বক্স খুলতেই তার থেকে তোড়ে বেরিয়ে আসে একশো আরশুলা। ভয়ে ক্লারা সেই মুহূর্তে হার্ট-ফেল করেন। ‘দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর- হ্যাঁ, স্ত্রীকে মারার কারণ ছিল, সেটা মিঃ জনসনের বিজনেস ফাইলগুলো ঘাঁটলেই বোঝা যাবে হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাঙ্কে তাঁর দেনা কত আর সুদসমেত কবে তা শোধ করতে হবে। হয়ত ‘ইউ অর মি বেব’ প্ল্যানটা নেবার সময় কথাটা তিনি ভাবেননি, কারণ ধারটা সদ্য করা। তবে কথাটা মাথায় আসতেই তিনি হত্যার ছক কষে নেন।
‘তৃতীয় প্রশ্নের জবাবে বলি, আরশুলা প্রামাণ্য অস্ত্র হিসেবে গৃহীত হতে পারে কিনা তার সিদ্ধান্ত মহামান্য আদালত নেবেন। আমার দায়িত্ব আমার কোম্পানিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা, খুনের কিনারা করার জন্যে পুলিশ আছে।
‘চতুর্থ প্রশ্ন। সাক্ষী বা প্রমাণ! কিসের প্রমাণ আপনি চান?’
‘আরশুলা যে মিঃ জনসনের আনা প্যাকেট থেকেই বেরিয়েছে, তার সাক্ষী বা প্রমাণ না পেলে পুরো গল্পের ভিতটাই তো নড়বড়ে হয়ে যায়।’
‘ইয়োর অনার, তাহলে আমার পরের সাক্ষীকে ডাকতে হচ্ছে। লিং!’- স্টোন হাঁক দেন। লিং এল, হাতে একটা ভাঙা ইন্টারন্যাল হার্ড-ডিস্ক আর তার থেকে উদ্ধার করা তথ্য একটা পেন ড্রাইভে নিয়ে। সেসব স্টোনের হাতে দিয়ে সে কাঠগড়ায় এসে দাঁড়াল। ‘স্যার, আমাদের ইনসেক্টের ব্যবসা সম্পূর্ণ বৈধ, ফার্মিং আর ট্রেড লাইসেন্স আছে। আর মিসেস জনসনের ভাঙা হার্ড-ডিস্ক থেকে রেকর্ডেড ভিডিওটা দেখুন প্লীজ!’ মিঃ স্টোন যাবতীয় তথ্য জাজের হাতে দিলেন। তাঁর সহকারী সেগুলো কোর্টের বড় স্ক্রীনে প্লে করলেন। সমস্ত কোর্টরুম স্তম্ভিত হয়ে দেখল মিসেস জনসন অভ্যাসমত টিফিনবক্স খুললেন আর তার ভেতরের একটা খোলা প্যাকেট থেকে একসাথে একঝাঁক আরশুলা বন্যার স্রোতের মত বেরিয়ে এল। ক্লারা আতঙ্কে উলটে পড়লেন আর তার পরেই সব ঝাপসা!
উপসংহার
৭ই জুন, ২০২২। টাইমস স্কোয়ারের একটা পাঁচতারা রেস্তোরাঁয় বসে আইসবার্গ, রেইনডিয়ার, ডায়না আর উকিল স্টোন। লিং-কেও ডাকা হয়েছে- না আরশুলা খাওয়াতে নয়, সম্ভবতঃ অক্সি-অফিসের কম্প্যুটারগুলোর জন্যে মেনটেনান্স কনট্রাক্ট পেতে চলেছে সে, তবে আজ সে অক্সিডেন্টালের স্পেশ্যাল গেস্ট। হ্যাঁ, ডাঃ হেটমেয়ারও আছেন, তিনিই আজকের লাঞ্চ পার্টির হোস্ট। বিজয়-সমারোহ উদযাপন করছেন তাঁরা, এম-ডির নিজের খরচে। ‘একটা গুড নিউজ আছে’- হেটমেয়ার ঘোষণা করলেন।
‘তোর প্রমোশন বা স্পেশ্যাল ইনক্রিমেন্ট নিশ্চয়’, মৃদুস্বরে বলে কনুই দিয়ে আইসবার্গের কোমরে একটা মৃদু গুঁতো দিল রেইনডিয়ার।
‘ইনক্রিমেন্ট তো হবেই সবার’, শেষ কথাটা এমডির কানে গেছে। ‘তবে এই বিউটি উইথ ব্রেইনটিকে আমার চাই- আমার অফিসের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট টিমের ম্যানেজার হিসেবে।’ সবাই উল্লাসে হইহই করে উঠল। শুধু ডায়না একটু লজ্জা লজ্জা মুখ করে বলল- ‘স্যার, আই অ্যাম রিয়েলি অনারড। তবে যদি কিছু মনে না করেন, আই এনজয় মাই প্রেজেন্ট জব দ্যান এনিথিং এলস। তাছাড়া আমি আর আইসবার্গ দুজনেই প্রচন্ড ফুডি……আর……আর…’
‘বলেই ফেল মাই ফেয়ার লেডি!’
‘আমার স্পেশ্যাল ক্ষিদেটা ওর চেয়ে ভাল কেউ বোঝেনা’- বলে মুখ নীচু করল ডায়না টেলার।
‘স্পেশ্যাল ক্ষিদে! কিসের?’
‘সেটা এমন জিনিষ যা খেতে-খেতেই খাওয়ানো যায়’- এবার উত্তর এল আইসবার্গের থেকে।
এক মুহূর্তের জন্যে থমকে গেলেন ডাঃ হেটমেয়ার। সবাই চুপ। এ আবার কী বলছে এরা! হঠাৎ প্রচণ্ড অট্টহাস্যে ফেটে পড়লেন দি অক্সিডেন্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্ণধার। হাসতেই থাকলেন…হাসতেই থাকলেন!
Supriyo Lahiry
February 3, 2023 |দারুণ দারুণ। শার্লক হোমসএর দ্য স্পেকল্ড ব্যান্ডসের কথা মনে পড়ে গেল।
PALLAB CHATTERJEE
February 5, 2023 |অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।