অজিত রায় : মলয় রায়চৌধুরী

অজিত রায় কেন আলোচিত তা ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত ‘যোজন ভাইরাস’ থেকে একটুকরো পড়ে স্পষ্ট হবে :

“…. রানী যখন তার চামড়ার ঘ্রাণ আর জেল্লা সমেত কমলের সামনে এসে দাঁড়ায়, যখনই, পেঁয়াজের ছিলকার চেয়েও মসৃণ অংসকুট এবং বেশ-কিছু নিচে চর্বি ঝরে যাওয়ার পরেও অবাক-হারে ওলন ও চোস্ত তার বক্ষগোলক-দুটি, স্রেফ ও-দুটি, কমল তো ভেবেই অস্থির হয়ে ওঠে, এ মেয়ে স্রেফ বডিসের হুকগুলো খুলে দিলেই তার, কমলের, সারাজীবনের লেখা স্থগিত থেকে যাবার পক্ষে এন্তার। এমনই উত্তুঙ্গু, এমনই উচ্ছ্রায়ী, এমনই সুডৌল, এমনই দ্রড়িষ্ঠ সে-দুটি। এবং, পুরো চিৎবুক হলেও একেবারে প্লেট হয়ে মিলিয়ে যায় না, সে-দুটো। কমল সাক্ষী।”

ধানবাদে   ১৯৬২ সালের ১৫ জুলাই  সিএফআরআই কলোনিতে জন্ম । রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক হবার পর আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছিল। চাকরি করেছে  কয়লা মার্চেন্ট অফিসের অ্যাকাউন্টেন্ট হিসাবে। বিয়ে করেছে বাড়ির অমতে যার দরুন দাদা-দিদিদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল । ‘যোজন ভাইরাস’ প্রকাশিত হবার পর অজিতের খ্যাতি ভালো লাগেনি ওর স্ত্রী রমার । প্রতিটি বই প্রকাশের পর স্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে। ক্রমে মেয়েও তার মায়ের সমর্থক হয়ে ওঠে । নিজেই তা লিখে গেছে । 

প্রাতিষ্ঠানিক” তথা “প্রতিষ্ঠান-বিরোধী” দুটো শব্দই ইদানিং চরম ঘৃণ্য; তবু, আজ আমি, অন্তত ‘বিবাহ’ ও ‘ফ্যামিলি’ ব্যাপারে জঘন্য ভাবে ঘৃণিত মনোভাবের পোষক।  অনুকম্পা জাগে, কিন্তু উপায় নেই। এসব মানুষ পাল্টায় না।  প্রাণী তো অভ্যাসেরই জীব, মানুষই মনুষ্যত্ব বহন করে।  আত্মজীবনী লিখতে হলে, আমায় তাই, নতুন শব্দকোড, নিওলজি, ডিসকোর্স তথা খিস্তি-অভিধানের অণ্ডকোষ অবধি পাল্টে দিতে হবে।  আমি চাই, প্রত্যেকে আমায় অপদার্থ ও ভুল বুঝে আমার বর্তে-থাকা জীবন থেকে বিদায় নিক।  আমি চাই, প্রত্যেকে আমায় অপদার্থ ও ভুল বুঝে আমার বর্তে-থাকা জীবন থেকে বিদায় নিক।  আমি চাই, প্রত্যেকে আমায় অপদার্থ ও ভুল বুঝে আমার বর্তে-থাকা জীবন থেকে বিদায় নিক।   এটিই আমার জীবনের শেষ অভিজ্ঞান।

‘ধানবাদ ইতিবৃত্ত’ প্রকাশিত হবার পর  হত্যার হুমকি সামলাবার জন্য দিল্লিতে বারীণ ঘোষালের বাড়িতে কয়েক মাস লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল যা ওর স্ত্রী আর মেয়েকে আরও ক্রুদ্ধ করে তুলেছিল । তবু, অনাহার, অর্ধাহার, পারিবারিক অবহেলা ও অত্যাচার সহ্য করে,  লেখা এবং নিজের লেখা নিয়ে ভাবা থামায়নি অজিত। ‘যোজন ভাইরাস’ লেখার পর অজিত বুঝতে পারে যে এক বিশেষ ধরণের গদ্য ও গড়ে ফেলতে পেরেছে, তৎসম, তদ্ভব, চলিত,  ফুটপাতিয়া-বাংলা, ঝাড়খণ্ডি-বাংলার মিশেল দিয়ে, যার নকল কেউ করতে পারবে না ; তারপর আর থামেনি । ১৯৮৮ সালে লেখা ‘দোগলাচরিত’-এ সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের গদ্য অনুসরণ করার জন্য ওর আপশোষ হতো । যোজন ভাইরাস-এর পর থেকে বাংলা উপন্যাসের নামকরণ শৈলীকেও অস্বীকার করেছে প্রতিটি বইয়ে ।

এখন দেখার যে বিদ্যায়তনিক জগত অজিত রায়কে গ্রহণ করে কিনা । নবারুণ ভট্টাচার্যের মতন পরিবার ও বন্ধুগোষ্ঠী  তো পায়নি অজিত ।

2 Comments

  • Subir Biswas

    Reply May 20, 2022 |

    মোটামুটি ধারণা-জন্মানো লেখা, আরও গভীরে জানার আগ্রহ জন্মায়।

  • Subir Biswas

    Reply May 20, 2022 |

    ওপর-ওপর ধারণা জন্মানো লেখা।

Write a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

loading...